বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক কোনো নির্দিষ্ট সরকার বা শাসনব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল হওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই বক্তব্য দেন।
রবিবার ওমানে অনুষ্ঠিত অষ্টম ভারত মহাসাগর সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেন তৌহিদ হোসেন। সেখানে সীমান্ত হত্যা, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, জেলেদের অধিকার, আদানি বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বক্তব্যসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হয়।
সাক্ষাৎকারে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পারস্পরিক স্বার্থ ও সম্মানের ভিত্তিতে গড়ে উঠবে।’ তিনি উল্লেখ করেন যে, বিএনপির শাসনামলেও বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বাণিজ্য দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছিল, তাই সম্পর্ক কোনো নির্দিষ্ট সরকারকেন্দ্রিক হওয়া উচিত নয়।
সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, ২০২৪ সালে ২৪ জন বাংলাদেশি সীমান্তে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, ‘ভারত প্রায়শই বলে যে সীমান্তে অপরাধ হচ্ছে, তাই গুলি চালানো হয়। কিন্তু বিশ্বের কোনো সীমানায় এভাবে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করা হয় না।’
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষ সমান নাগরিক অধিকার ভোগ করেন। সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের সরকারের দায়িত্ব।’ তবে তিনি দাবি করেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারতীয় মিডিয়ায় সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে অতিরঞ্জিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংখ্যালঘু নির্যাতনে জড়িত ছিল না।
ভারত-বাংলাদেশ বিদ্যুৎ সরবরাহ সংক্রান্ত আদানি পাওয়ার প্রকল্প নিয়ে তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ সরবরাহ চুক্তি অনুযায়ী চলবে, তবে যদি কোনো অনিয়ম থাকে, তাহলে যৌথভাবে পর্যালোচনা করা হবে। বিদ্যুতের দাম তুলনামূলক বেশি হওয়ায় কয়লার ক্রয়মূল্য পুনরায় আলোচনা করা যেতে পারে।’
তিনি জানান, আগামী এপ্রিল মাসে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে বৈঠক হতে পারে। তবে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি এবং সম্মেলনের আগে এই বিষয়ে আলোচনা হবে।
শেখ হাসিনার দেশে ফেরার প্রসঙ্গে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, তাই বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশে ফেরানোর জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে। যদি ভারত তাকে ফেরত না পাঠায়, তবে অন্তত তার বক্তব্যে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা উচিত যাতে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি না হয়।’
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক শুধু সরকার পরিবর্তনের ওপর নির্ভরশীল নয়, বরং পারস্পরিক স্বার্থ ও কূটনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে এগিয়ে নেওয়াই গুরুত্বপূর্ণ। সীমান্ত হত্যা, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ চুক্তি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার মতো বিষয়গুলোতে দুই দেশকে আরও সংবেদনশীল ও দায়িত্বশীল হতে হবে।