উত্তরা বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ১৬, দগ্ধ বহু শিক্ষার্থী—শোকাচ্ছন্ন গোটা দেশ

0
18

ঢাকার উত্তরা এলাকায় সোমবার দুপুরে সংঘটিত বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এক প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমানের বিধ্বস্ত ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ জনে। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। এছাড়াও বহু শিক্ষার্থী ও শিক্ষক দগ্ধ ও আহত অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। দুর্ঘটনার পর পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

ঘটনাটি ঘটে সোমবার দুপুর আনুমানিক ১টা ১০ মিনিটে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান উড্ডয়নের কয়েক মিনিটের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইলস্টোন কলেজের জুনিয়র সেকশনের ভবনের ওপর ভেঙে পড়ে। দুর্ঘটনার পরপরই বিকট বিস্ফোরণ এবং আগুন ধরে যায় ভবনটিতে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ওই সময় স্কুলে প্রথম থেকে সপ্তম শ্রেণির ক্লাস চলছিল। হঠাৎ বিকট শব্দে সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। অনেক শিক্ষার্থী কান্নায় ভেঙে পড়ে এবং শিক্ষকদের সহায়তায় নিরাপদ স্থানে সরে যায়। ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি ও স্থানীয়রা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করেন।

মাইলস্টোন কলেজের জনসংযোগ কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ ও প্রভাষক রেজাউল ইসলাম জানান, বিমানটি সরাসরি শিশু বিভাগের ভবনে আঘাত হানে। ওই ভবনে নার্সারি থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস চলছিল। আগুন ও ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেক শিক্ষার্থী আটকে পড়ে। এখনো অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ঘটনার পর উদ্ধার কাজ চালাতে গিয়ে ধ্বংসস্তূপ থেকে ১৬টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। আহতদের মধ্যে অনেকেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, উত্তরা আধুনিক হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

আইএসপিআর জানিয়েছে, বিমানটি দুপুর ১টা ৬ মিনিটে উড্ডয়ন করে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই বিধ্বস্ত হয়। প্রশিক্ষণ বিমানে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগর একমাত্র পাইলট ছিলেন। দুর্ঘটনার সময় তিনি প্যারাসুট ব্যবহার করে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন এবং বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি আহতদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।

এই দুর্ঘটনা রাজধানীর নাগরিকদের মাঝে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষ করে জনবহুল আবাসিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এলাকায় বিমান প্রশিক্ষণ কার্যক্রম কতটা নিরাপদ, তা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সরকারি তথ্যমতে, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। উদ্ধার কাজ এখনো অব্যাহত রয়েছে এবং ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here