২০২৫ সালের ২১ জুন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র একটি বড়সড় সামরিক অভিযানে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। বলা হচ্ছে, এই হামলাটি ছিল ট্রাম্পের দুই মেয়াদের সবচেয়ে তীব্র সামরিক পদক্ষেপ এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যকার ৪৬ বছরের সংঘাতের এক নতুন মোড়। মার্কিন বিমান বাহিনীর বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমানগুলো মিসৌরি ঘাঁটি থেকে রওনা হয়ে ‘বাংকার বাস্টার’ বোমা ব্যবহার করে ফোর্ডোসহ অন্তত তিনটি গোপন পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়।
ট্রাম্প দাবি করেছেন, এসব হামলার ফলাফল ছিল “মৌলিক এবং ঐতিহাসিক,” যা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে বছরের পর বছর পেছনে ঠেলে দিয়েছে। তিনি সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “হামলাগুলো ছিল শক্তিশালী এবং সঠিক।” তবে তাঁর এই বিজয়োল্লাসমূলক বিবৃতির বিপরীতে বাস্তব চিত্র অনেকটাই অনিশ্চিত ও বিপজ্জনক।
হাউস ইন্টেলিজেন্স কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট জিম হিমস বলেছেন, “যারা বলছেন এই হামলা ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা ধ্বংস করেছে, তাদের আসলে কিছুই বোঝা নেই। এখন পর্যন্ত আমরা জানি না, ইরান তার কোনো সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম বা গবেষণা সামগ্রী হামলার আগেই সরিয়ে নিতে পেরেছে কিনা।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, হামলার আগে যদি ইরান পারমাণবিক উপাদান সরিয়ে রাখতে সক্ষম হয়ে থাকে, তবে এই হামলা কার্যত তাদের আরও দ্রুত একটি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে তাগিদ দিতে পারে। এটি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য চরম হুমকিস্বরূপ হতে পারে।
ইরানের জাতিসংঘ প্রতিনিধি আমির-সাঈদ ইরাভানি জানিয়েছেন, “এই হামলার সময়, মাত্রা এবং প্রকৃতি বিবেচনা করে সশস্ত্র বাহিনী একটি উপযুক্ত পাল্টা জবাবের সিদ্ধান্ত নেবে।” ফলে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে এখন উদ্বেগ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে—যেকোনো মুহূর্তে ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলা শুরু হতে পারে।
এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ এক বিস্ফোরক মন্তব্য করে বলেন, “রেজিম চেঞ্জ (শাসন পরিবর্তন) কেন হবে না?” যা তাঁর প্রশাসনের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে আরও প্রশ্ন তুলেছে। যদিও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স নিশ্চিত করেছেন যে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সরকার পতনের চেষ্টা করছে না, তবু ট্রাম্পের এই মন্তব্য নতুন ‘মিশন ক্রিপ’-এর আশঙ্কা তৈরি করেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরানে আয়াতুল্লাহ খামেনির উত্তরসূরি প্রশ্নে এরইমধ্যে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে টানাপোড়েন চলছে। এর মধ্যেই আমেরিকা এবং ইসরায়েলের হামলা ইরানের আঞ্চলিক আধিপত্য ও সামরিক কৌশলে বড় ধাক্কা দিয়েছে। ফলস্বরূপ, ভবিষ্যতে ইরানে গণবিক্ষোভ, দমন-পীড়ন অথবা রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হলে সেটি গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে।
এই হামলার রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও দৃশ্যমান। রিপাবলিকান নেতারা ট্রাম্পের “সাহসী পদক্ষেপের” প্রশংসা করলেও অনেক রক্ষণশীল বিশ্লেষক মনে করছেন, ট্রাম্প তার ‘ম্যাগা’ আন্দোলনকে একটি অনিশ্চিত যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।
আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো—কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে ট্রাম্প সরাসরি একটি যুদ্ধমূলক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যেটি সাংবিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রশ্নবিদ্ধ। এখন বিশ্ব অপেক্ষা করছে—ইরান কিভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে, এবং এটি কিভাবে নতুন এক ভয়াবহ যুদ্ধের জন্ম দিতে পারে।