“যুদ্ধ শুরু হলো”— ইরানের সর্বোচ্চ নেতার হুঁশিয়ারি, খায়বারের ইতিহাস টেনে ইসরায়েলকে তীব্র বার্তা

0
28
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। ছবি: সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার নতুন মাত্রা যোগ করলো ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির সাম্প্রতিক মন্তব্য। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার)-এ প্রকাশিত এক পোস্টে তিনি ঘোষণা করেছেন, “যুদ্ধ শুরু হলো”, সাথে যুক্ত করেছেন একটি ঐতিহাসিক বার্তা: “আলি খায়বারে ফিরে এসেছেন”। এই ঘোষণাকে ইসরায়েলবিরোধী এক তীব্র হুঁশিয়ারি হিসেবে দেখছে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।

টাইমস অব ইসরায়েল-এর বরাতে জানা যায়, ‘খায়বার’ শব্দটি সপ্তম শতকে মুসলিমদের হাতে ইহুদি জনপদ খায়বার বিজয়ের ইতিহাসের প্রতি ইঙ্গিত করে। ওই বিজয়ে অংশগ্রহণকারী প্রধান যোদ্ধা ছিলেন ইমাম আলী (রা.), যিনি শিয়া মুসলমানদের কাছে প্রথম ইমাম এবং ইসলামের ইতিহাসে এক মহান বীর। ‘আলি খায়বারে ফিরে এসেছেন’ বাক্যটি স্পষ্টভাবে বোঝায়, ইরান নিজেদের ‘ধার্মিক সংগ্রাম’-এর সূচনা হিসেবে তুলে ধরছে এই রাজনৈতিক বার্তায়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই পোস্টটির মাধ্যমে আয়াতুল্লাহ খামেনি প্রথমবারের মতো সরাসরি প্রতিক্রিয়া জানালেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক হুমকির জবাবে। ট্রাম্প সম্প্রতি একাধিক পোস্টে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার অবস্থান সম্পর্কে মন্তব্য করেন এবং বলেন, “তিনি সহজ লক্ষ্যবস্তু, কিন্তু ‘এই মুহূর্তে’ তাকে হত্যা করব না।”

ট্রাম্প আরও বলেন, “আমরা চাই না বেসামরিক নাগরিক বা আমেরিকান সৈন্যদের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ হোক। আমাদের ধৈর্য ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।” তার অন্য এক পোস্টে দেখা যায়, তিনি দাবি করেন “ইরানের আকাশসীমা আমাদের নিয়ন্ত্রণে।” এসব পোস্টের ধারাবাহিকতায় ট্রাম্প শেষমেষ লেখেন “নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ!”

খামেনির বার্তা ছিল শুধু ইসলামি আবেগে ভরপুর নয়, বরং তিনি আরও লিখেছেন, “সন্ত্রাসী জায়নবাদী শাসনের বিরুদ্ধে আমাদের শক্ত প্রতিক্রিয়া জানানো উচিত। আমরা ইহুদিবাদীদের কোনো দয়া দেখাব না।” এখানে ‘জায়নবাদী শাসন’ বলতে ইসরায়েলকেই বোঝানো হয়েছে।

‘হায়দার’ নামটি ইমাম আলী (রা.)-এর একটি উপাধি। মুসলিম ইতিহাসে তিনি বিখ্যাত ‘লায়ন অব গড’ হিসেবে পরিচিত এবং খায়বার যুদ্ধে তাঁর অসাধারণ বীরত্ব ইতিহাসের অংশ। ইরানসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে শিয়া মুসলমানরা তাঁকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সঙ্গে স্মরণ করেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, খামেনির এ ধরনের বার্তা শুধু রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া নয়, বরং এটি মধ্যপ্রাচ্যের বিদ্যমান উত্তেজনাকে আরও উসকে দিতে পারে। বিশেষ করে যখন গাজায় ইসরায়েলি হামলা ও ইরান-মার্কিন সম্পর্ক নতুন করে উত্তপ্ত হচ্ছে, তখন এই ধরনের ঘোষণার কূটনৈতিক ও সামরিক গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

এদিকে, আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে খামেনির সরাসরি যুদ্ধঘোষণামূলক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে। ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতি ইসরায়েল-ইরান সরাসরি সংঘাত বা একটি আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেক নিরাপত্তা বিশ্লেষক।