মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে নতুন মোড় নিয়েছে ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) এর সর্বশেষ পদক্ষেপে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবহার করা হয়েছে ইরানের প্রথম হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘ফাত্তাহ’। আইআরজিসির দাবি অনুযায়ী, এই ক্ষেপণাস্ত্র সফলভাবে ইসরায়েলের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’ ভেদ করতে সক্ষম হয়েছে।
আইআরজিসি তাদের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার ইসরায়েলের আয়রন ডোমের জন্য ‘শেষের শুরু’।” যদিও ইসরায়েল সরকারের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি।
কী এই ‘ফাত্তাহ’ ক্ষেপণাস্ত্র?
‘ফাত্তাহ’ শব্দের অর্থ ‘উন্মোচনকারী’। এটি ইরানের তৈরি প্রথম হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র, যার গতি শব্দের গতির ৫ গুণ, অর্থাৎ ঘণ্টায় প্রায় ৬,১০০ কিলোমিটার। ২০২৩ সালে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে এটি উৎক্ষেপণ করা হয়।
সেই সময়ে আইআরজিসি অ্যারোস্পেস বিভাগের তৎকালীন প্রধান আমির আলি হাজিজাদেহ একে উল্লেখ করেছিলেন ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির এক “প্রজন্মগত উল্লম্ফন” হিসেবে। তিনি বলেন, “ফাত্তাহ যেকোনো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম। এটি বায়ুমণ্ডলের বাইরে ও ভেতরে উভয় স্তরে গতিপথ পরিবর্তনের ক্ষমতা রাখে। একে ধ্বংস করা অত্যন্ত কঠিন, কারণ এটি বিভিন্ন উচ্চতা ও দিক পরিবর্তন করতে পারে তাৎক্ষণিকভাবে।”
প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য:
-
পাল্লা: ১,৪০০ কিলোমিটার
-
জ্বালানি: কঠিন জ্বালানি
-
গতি: হাইপারসনিক (ম্যাক ৫ বা তার বেশি)
-
বিশেষত্ব: ম্যানুভারেবল রিএন্ট্রি ভেহিক্যাল (MRV) যা প্রতিরক্ষা ভেদে সহায়ক
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই MRV-র মাধ্যমে ফাত্তাহ লক্ষ্যস্থলে পৌঁছানোর মুহূর্তে দিক পরিবর্তন করতে পারে, যা অধিকাংশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য মারাত্মক চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। এমনকি ইসরায়েলের উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ডেভিড’স স্লিং কিংবা অ্যারো সিস্টেমও এই হাইপারসনিক গতির ওয়্যারহেড থামাতে হিমশিম খায়।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ
ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (IISS)-এর গবেষক ফ্যাবিয়ান হিনজ বলেন, “ফাত্তাহ হলো এমন একটি ক্ষেপণাস্ত্র, যা শুধু গতি নয়, বরং কৌশলগত অভিযোজনে পারদর্শী। এটি যুদ্ধক্ষেত্রে খেলাও পাল্টে দিতে পারে।”
বিশ্লেষকেরা আরও বলছেন, যদিও অধিকাংশ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রই আকাশে উঠে হাইপারসনিক গতিতে পৌঁছে, কিন্তু ফাত্তাহ-এর মতো দিক পরিবর্তনকারী হাইপারসনিক অস্ত্র খুবই বিরল ও জটিল। এমন প্রযুক্তি সাধারণত রাশিয়া ও চীন ব্যবহার করে থাকে। ইরান যদি সত্যিই সফলভাবে এটি ব্যবহার করে থাকে, তবে এটি মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক ভারসাম্যে বড় ধাক্কা হতে পারে।
‘আয়রন ডোম’ কতটা ঝুঁকিতে?
ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’ মূলত রকেট ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধে কাজ করে। তবে এটি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে দক্ষ নয় বলে অনেক বিশ্লেষক মত দিয়েছেন। যদিও ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকৃত THAAD (Terminal High Altitude Area Defense) ব্যবস্থা রয়েছে, এটি দূরপাল্লার জন্য তৈরি এবং তুলনামূলকভাবে দামি ও সীমিত।
বর্তমানে ফাত্তাহ-১ ব্যবহার নিয়ে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে কথার লড়াই ছাড়িয়ে বাস্তব সংঘর্ষে গড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে। দুই দেশের মধ্যে এই সামরিক পাল্টাপাল্টি আঘাত বিশ্ব রাজনীতিতে এক অনিশ্চিত দিক নিয়ে আসতে পারে।