অভিনয় বা স্পোর্টসম্যান না হয়েও সেলিব্রিটি হওয়া যায়।

0
154

অভিনয় বা স্পোর্টসম্যান না হয়েও সেলিব্রিটি হওয়া যায়। বলতে হবে সংবাদ পাঠকরে তিনি দর্শক প্রিয়তা পেয়েছেন। সংবাদের মতো কাঠ কোট্টা বিষয় উপস্থাপন করেও যে মানুষের কাছাকাছি পৌছানো যায়, তিনিই তা প্রমাণ করেছেন। বলছি বেসরকারি টিভি চ্যানেল টুয়েন্টি ফোরের সিনিয়র সংবাদ পাঠক ফারাবীহাফিজের কথা। এতো এতো বেসরকারি চ্যানেলের এতো এতো প্রেজেন্টারের মধ্যে তিনি আলাদা করে নিজেকে চিনিয়েছেন। সেটা কিভাবে। ঘণ্টাখানেকের আড্ডায় জানা গেলো কিছুটা।
২০০৯ সালে যখন তিনি অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্র থাকার সময় শুরু করেন তার টেলিভিশন ক্যারিয়ার। অবশ্য সে সময় দেশ টিভিতেশুরু করেছিলেন রিপোর্টার হিসেবে। এর পর সংবাদ ভিত্তিক চ্যানেল হিসেবে যাত্রা করে এটি এন নিউজ। সেখানে ও তিনি যোগ দেন রিপোর্টার হিসেবে। গল্পে গল্পে জানান, এটিএননিউজ থেকে পরের বছর তিনি সময় টিভিতে জয়েন করেন। উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এটি এন নিউজ তখনএক মাত্র সংবাদ ভিত্তিক চ্যানেল হিসেবে আত্ম প্রকাশ করে। মুন্নীসাহার চ্যানেল হিসেবে ভালোই নাম কুড়িয়েছিলো। তারপরও কেন সময় টিভিতে গেলেন? প্রশ্ন শুনে এক গাল হাসলেন। হাসতে হাসতেই জানালেন, এটি এন নিউজের গাড়িগুলো ছিলো সুজুকির নন এসিগাড়ি। বলতে বলতে আবার হাসিৃ।
টেলিভিশনের সংবাদ বলতেআমরা গুরুগম্ভীর, ভারী, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কেই বুঝি। কিন্তু ফারাবী হাফিজের সংবাদ উপস্থাপনের ধরণ একদম সাবলীল। অনেকটামনে হয়, টেলিভিশনের ভেতর থেকে তিনি আমার সাথে কথা বলছেন। এটা কিভাবে? উত্তরে জানালেন, ঠিক এই চেষ্টাটাই তিনি। টিভি সেটের সামনে বসা যে মানুষটা খবর দেখতে বসেছেন, তাকে উদ্দেশ্য করেই খবরটা জানানো।
গল্পে গল্পে জানালেন, পত্রিকার সংবাদ সব শ্রেণী, পেশাবা বয়সের মানুষপড়েন না। কিন্তু টেলিভিশনের সংবাদ সবার উপযোগী করে তৈরি করতে হয়। যেহেতু সমাজের নিরক্ষর শ্রেণী থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পর্যায়ের মানুষ এই খবর দেখে, তাই এমন ভাবে সংবাদ পরিবেশন করতে হয় যেন কারোই বুঝতে কোন অসুবিধানা হয়। এই বিষয়টাই সবচেবড় চ্যালেঞ্জ।
তিনি বলছিলেন, একজন সংবাদ পাঠকের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সংযোগ স্থাপন। অন্য ভাবে এটিকে নিউজ বিক্রি করা ও বলা যেতে পারে। উৎসুক দৃষ্টিনিয়ে জানতে চাইলাম, বিষয়টা আসলে কেমন? তিনি জানান, একটি টিভি নিউজে ২০০ থেকে শুরু করে ৭০০ মানুষ কাজ করে। মালিক বিরাট এক টাইনভেস্ট করে বসে আছে। দিন শেষে এই ৭০০ মানুষ মিলে যে প্রোডাক্ট তৈরি করে তা ভোক্তাদের নিকট কার্যকর ভাবে পৌছানো। শুধু পৌছানোনা তার মধ্যে যেন প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় এমনভাবে পৌছানো। যদি এভাবেইএকজন প্রেজেন্টারতার এই কাজটি করতে পারেন, তাহলে তাকে তার কাজের ক্ষেত্রে সফল বলা যায়। অফিস মূল্যায়ন করে আবারসাধারণ দর্শক শ্রেণীরকাছেও পৌছানোযায়।
তাহলতো কাজটি বেশ কঠিন?জবাবে হেসে হেসে জানালেন, কাজটা পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ কাজের একটি। যদি আপনি এমন একটা কাজ করেন, যা আপনাকে আনন্দ দেয়, তাহলে সেই কাজটি সবচেয়ে মজার কাজ হয়। তবে হ্যা এটি অনেক সময় চ্যালেঞ্জিং হয়। বিশেষ করে যখন বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটে। তখন আপনাকে প্রযুক্তির বাইরে এসে নিজেকে প্রমাণ করতে হয়। ২০০৯ সালে পুরান ঢাকার নিমতলী অগ্নীকাণ্ডের রাতেওখানে যাওয়ার পর আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া একটা মানুষের হাত ধরেউদ্ধার কর্মীদের সাথে সহায়তা করতে গিয়েছিলাম। আমার হাতে মৃত মানুষটির বাম হাতের পুরো দগদগে মাংস যখন খুলে আসলো, আমি টিভির সামনে যেতে পারিনি কয়েক দিন। ফারাবী জানালেন, এমন ঘটনার মধ্য দিয়ে যখন স্ক্রিনে আপনাকে নরমাল থাকতে হয়, তারমানে এই টুকু চ্যালেঞ্জ নেয়ার জন্য আপনাকে মানসিক ভাবে তৈরি থাকতে হবে।
সংবাদ পাঠের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে তিনি ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশে প্রবেশের ঘটনার কথা জানালেন। রোহিঙ্গাদের ঢল শুরু হয়েছে। ঈদের আগে চ্যানেলটুয়েন্টিফোর এ ঘটনাকে গুরুত্ব দিয়ে কাভার করতে চাইলো। মিটিংয়ে আমি আইডিয় াদিলাম, ঘটনাস্থল অর্থাৎ কক্সবাজারের কুতুপালংক্যাম্প থেকে আমরা নিউজ পড়বো। ওখান থেকেই রিপোর্টারদের মতো লাইভ নিউজ প্রেজেন্টেশন হবে। নির্বাহী পরিচালক এবং সিই ও স্যারএটা চ্যালেঞ্জিং আইডিয়া। করতে পারবোকিনা জানতে চাইলো। কারন, সংবাদ কিন্তু আমরা অটোকিউবা টেলিপ্রম্পটার নামেরএকটা যন্ত্রের সাহায্যে দেখে দেখে পড়ি। ওটা ওখানে থাকবেনা। টক ব্যাক, স্ক্রিপ্ট সহ সাপোর্টিং আরো বহু কিছু থাকে তার কিছুই থাকবেনা। কনফিডেন্ট হয়ে বললাম পারবো। দরকার সবচেয়ে ভালো একটা প্রোডাকশন টিম। সাকিব নামের আমাদের এক ডায়নামিক এবং ব্রিলিয়ান্ট প্রডিউসারকে দিল অফিস। সকাল ৬টায় কক্সবাজার শহর থেকে কিছু খেয়ের ওনা হতাম ৫০ কিলোমিটার দূরে কুতুপালংয়ে আর রাতে ১১ টায়এসে কিছু খেতাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here