ধর্ষণের মামলা করে প্রাণ হারালেন বাবা, দীর্ঘসূত্রতার শিকার হাজারো বিচারপ্রক্রিয়া

0
23

বাংলাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করার পর বিচার পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় ভুক্তভোগীদের। এ সময় তারা নানা ধরনের হুমকি, সামাজিক চাপ ও পুলিশের অবহেলার শিকার হন। বরগুনার এক ঘটনায় ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করার পর বাবার লাশ বাড়ির পাশের ঝোপে পাওয়া যায়।

আইন অনুসারে, ১৮০ দিনের মধ্যে এ ধরনের মামলার বিচার শেষ করার কথা থাকলেও বাস্তবে তা সম্ভব হচ্ছে না। সুপ্রিমকোর্টের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ১ লাখ ৫১ হাজার ৩১৭টি নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা বিচারাধীন রয়েছে, যার মধ্যে ৩২ হাজার ৯৭২টি মামলা পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে ঝুলে আছে। এছাড়া, পুলিশের কাছে তদন্তাধীন রয়েছে ২০ হাজার ১৩৫টি মামলা, যা মোট মামলার ৩৬ শতাংশ।

অপরাধীরা জামিন পেয়ে পুনরায় অপরাধে জড়াচ্ছে

নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে বিচার দীর্ঘসূত্রতার কারণে অপরাধীরা জামিন পেয়ে নতুন করে অপরাধ করছে। মেহেরপুরের এক ঘটনায়, ৯ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি জামিনে মুক্তি পেয়েই ভুক্তভোগীর পরিবারকে ভিডিও ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবারকে মামলা তুলে নেওয়ার চাপ দেওয়ায় সদর থানার এক এসআইকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

২০১৬ সালে দিনাজপুরে এক শিশুর বিরুদ্ধে ভয়াবহ যৌন নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত আসামি সম্প্রতি জামিন পেয়ে গেছে, যা বিচারপ্রক্রিয়ার ধীরগতির আরেকটি উদাহরণ।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের বাস্তবতা

২০১৩ সালে সংশোধিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বলা হয়েছে, ট্রাইব্যুনালকে ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করতে হবে। তবে বাস্তবে দেখা যায়, বিচারপ্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ায় বাদীপক্ষ সামাজিকভাবে হয়রানির শিকার হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে মামলা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়।

এছাড়া, পুলিশের দীর্ঘ তদন্ত, সাক্ষীদের অনুপস্থিতি এবং নথিপত্রে ভুলের কারণে মামলার বিচার দুর্বল হয়ে পড়ে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আসামি জামিন পেয়ে যায়, যা নতুন অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে।

নারী নির্যাতনের বর্তমান চিত্র

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশে ১৭ হাজার ৫৭১টি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। আগের বছরগুলোর তুলনায় এই সংখ্যা কিছুটা কমলেও অপরাধীদের শাস্তি না হওয়ার কারণে অপরাধের মাত্রা কমছে না।

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা অপরাধীদের আশার সঞ্চার করে। তারা মনে করে, বিচার না হলে অপরাধ করেও পার পেয়ে যাওয়া সম্ভব। ফলে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের মতো ঘটনা বারবার ঘটছে।

বিচারহীনতা দূর করতে করণীয়

  • নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বিশেষ আদালত ও তদন্তকারী সংস্থা গঠন করতে হবে।
  • পুলিশ ও প্রশাসনের মধ্যে রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত রাখতে হবে, যেন তারা নিরপেক্ষ তদন্ত করতে পারে।
  • ধর্ষণ মামলা দায়েরের পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে মেডিক্যাল পরীক্ষা করাতে হবে।
  • সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি অপরাধীদের জন্য কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার বিভাগ এবং সামাজিক আন্দোলনের সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া এই সংকট থেকে মুক্তি সম্ভব নয়।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here