গাজীপুর, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ — গাজীপুরের শ্রীপুরে মাদকাসক্ত ছেলের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে শেষমেশ নিজেই তাকে কুপিয়ে হত্যা করেন মোহাম্মদ আলী (৭০)। আজ বুধবার সকাল আটটার দিকে শ্রীপুর মডেল থানায় এসে নিজেই হত্যার কথা স্বীকার করে আত্মসমর্পণ করেন তিনি।
শ্রীপুর থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মোহাম্মদ আলী থানায় এসে জানান, তিনি তাঁর ছেলে মো. আনোয়ার হোসেনকে (২৮) ধারালো বটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছেন। পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রহলাদপুর এলাকার নিজ বাড়িতে গিয়ে আনোয়ারের মরদেহ উদ্ধার করে। মরদেহটি ঘরের ভেতর পড়ে ছিল এবং পাশেই পাওয়া যায় রক্তমাখা বটি।
শ্রীপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শামীম আক্তার বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মোহাম্মদ আলী ছেলে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। মরদেহটি উদ্ধার করে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য।
স্থানীয়রা এবং পরিবারের সদস্যরা জানান, আনোয়ার হোসেন ছিল দীর্ঘদিনের মাদকাসক্ত। বিদেশে (দুই বছর মালয়েশিয়া ও চার বছর সৌদি আরব) থাকার পর দেশে ফিরে সে মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে এবং নিয়মিত পরিবারের সদস্যদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত।
আনোয়ারের মামা আবদুল জলিল জানান, “মাদক কেনার টাকা না পেলে সে বাবা-মাকে মারধর করত। মঙ্গলবার রাতেও সে তার বাবাকে বেধড়ক মারধর করে। এই ঘটনার পরই হয়তো তাঁর বাবা এমন সিদ্ধান্ত নেন।”
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. শহীদ উল্লাহ বলেন, “আনোয়ার একেবারে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিল। আত্মীয়স্বজন অনেকবার চেষ্টা করেছিল তাকে ঠিক পথে ফেরানোর, কিন্তু সে কারো কথা শোনেনি।”
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, “এটি একটি অত্যন্ত মর্মান্তিক ও সামাজিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বাবা নিজেই থানায় এসে হত্যার কথা স্বীকার করায় তাঁকে আইন অনুযায়ী গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।”
এই ঘটনা শুধু একটি হত্যাকাণ্ড নয়, বরং মাদকাসক্তি কীভাবে একটি পরিবারকে ধ্বংস করে দিতে পারে তার নির্মম উদাহরণ। মাদক নিয়ন্ত্রণে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্মিলিত উদ্যোগ এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।