ঢাকা, ১৬ মার্চ: বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যুক্তরাজ্যের সাবেক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সরকারি প্লট হস্তান্তরের অভিযোগ এনেছে। দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে, টিউলিপ সিদ্দিক ভুয়া নোটারি পাবলিক ব্যবহার করে তার বোনের কাছে একটি সম্পত্তি হস্তান্তর করেছেন। এমনকি ব্যবহৃত নোটারি পাবলিকের সইও জাল বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস গতকাল শুক্রবার এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টিউলিপ সিদ্দিক রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ঢাকার পূর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্পে তার ও পরিবারের জন্য সরকারি প্লট বরাদ্দ নিয়েছিলেন।
দুদকের অভিযোগপত্র
গত বৃহস্পতিবার দুদক প্রকাশিত এক অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, টিউলিপ সিদ্দিক ভুয়া নোটারি পাবলিক ব্যবহার করে তার বোন আজমিনা সিদ্দিককে ঢাকার গুলশানের একটি ফ্ল্যাট হস্তান্তর করেন। তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, এই নোটারিতে ব্যবহৃত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী সিরাজুল ইসলামের সিল জালিয়াতি করা হয়েছে। সিরাজুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন যে, তিনি টিউলিপ বা তার বোনের সঙ্গে পরিচিত নন এবং তিনি এই নোটারি করেননি।
দুদকের অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, টিউলিপ সিদ্দিক ঢাকায় পূর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্পের ৬০ কাঠা জমি নিয়মবহির্ভূতভাবে নিজের ও পরিবারের জন্য বরাদ্দ নিয়েছেন। বাংলাদেশে সরকারি প্লট পাওয়ার নিয়ম অনুযায়ী, কারও নামে ঢাকায় আগেই সম্পত্তি থাকলে তিনি নতুন করে সরকারি জমি বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য নন। কিন্তু টিউলিপ সিদ্দিক এই শর্ত লঙ্ঘন করেই প্লট বরাদ্দ নেন।
শেখ হাসিনার পরিবারের বিরুদ্ধে তদন্ত
দুদকের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, “সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে। পূর্বাচল প্রকল্পে বরাদ্দকৃত জমির অনিয়ম ছাড়াও তাদের সম্পদের উৎস ও অন্যান্য অর্থনৈতিক কার্যক্রম খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, গত বছরের আগস্টে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের অবসানের পর থেকেই তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে থাকে। দুদকের দাবি, শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যরা আইন লঙ্ঘন করে সরকারি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন এবং এটি রাষ্ট্রের সম্পদের অপব্যবহারের শামিল।
টিউলিপ সিদ্দিকের প্রতিক্রিয়া
টিউলিপ সিদ্দিক এর আগে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, এটি রাজনৈতিক চক্রান্তের অংশ এবং তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য করা হচ্ছে। তবে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের পক্ষ থেকে তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেননি।
দুদকের এই অভিযোগ আদালতে উপস্থাপন করা হলে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানা গেছে।