Home আন্তর্জাতিক হামাস আত্মসমর্পণ করবে না: গাজায় চলমান যুদ্ধ ও নেতানিয়াহুর কৌশলের ব্যর্থতা

হামাস আত্মসমর্পণ করবে না: গাজায় চলমান যুদ্ধ ও নেতানিয়াহুর কৌশলের ব্যর্থতা

0
6
হামাস এবং গাজাবাসী প্রতি রাতে যে সাজা ভোগ করছে, তাতে সংগঠনটির নত না হওয়ার অনেক কারণ আছে।ফাইল ছবি: রয়টার্স

গাজা—যে নাম উচ্চারিত হলেই চোখে ভেসে ওঠে ধ্বংস, রক্তপাত আর অবরুদ্ধ জীবনের করুণ ছবি। কেউ এটিকে বলেন ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় খোলা কারাগার’, কেউ বলেন ‘হত্যার ময়দান’। কিন্তু এই মৃত্যু উপত্যকার অন্তর্গত প্রতিরোধের গল্পটা এখনও শেষ হয়নি।

ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি সামরিক অভিযানের মধ্যেও এক বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে—হামাস আত্মসমর্পণ করবে না। প্রায় ১৮ মাস ধরে চলা যুদ্ধ আর দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজার মানুষ খাবার, পানি ও চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত থেকেও তাঁদের অবস্থানে অনড়।

ইসরায়েল সম্প্রতি যে চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছিল, সেটি ছিল কার্যত আত্মসমর্পণের শর্ত। ৪৫ দিনের খাবার ও পানির বিনিময়ে হামাসের অস্ত্র সমর্পণ ও সব ইসরায়েলি জিম্মি মুক্ত করার দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু হামাস পাল্টা প্রস্তাব দেয়, নির্দিষ্ট ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময়ে জিম্মি মুক্তি এবং একটি দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতি। তারা গাজার প্রশাসন অন্য গোষ্ঠীর কাছে হস্তান্তর ও অস্ত্র উৎপাদন বন্ধ করতে রাজি হলেও নিরস্ত্র হওয়ার শর্ত প্রত্যাখ্যান করে।

এই প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ভূমিকা সামনে এসেছে বারবার। তাঁর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য, যেমন বাজেটভোটে জয়লাভ কিংবা রাজনৈতিক জোট রক্ষা করতেই, তিনি বারবার যুদ্ধকে পুঁজি করছেন বলে সমালোচকদের দাবি। জানুয়ারিতে জিম্মি মুক্তির চুক্তিতে রাজি হয়ে পরে তা ভেঙে দিয়ে তিনি আলোচনার পথ বন্ধ করে দেন। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাও ভেস্তে যায় তাঁর কারণে।

নেতানিয়াহুর এই মনোভাব ও কৌশল শুধু হামাসের শক্তি বাড়িয়েছে নয়, গাজার সাধারণ মানুষকেও আরও বেশি প্রতিরোধের দিকে ঠেলে দিয়েছে। গাজার প্রায় প্রতিটি পরিবার এখন যুদ্ধের শিকার—কেউ হারিয়েছে সন্তান, কেউ বাসস্থান, কেউ পুরো পরিবার। এই সম্মিলিত দুঃখ–বেদনা গাজার মানুষদের মধ্যে নিজেদের ভূমিতে টিকে থাকার এক দুর্দান্ত মনোবল তৈরি করেছে।

ইসরায়েলের আগ্রাসনে গাজার প্রায় প্রতিটি হাসপাতাল, স্কুল ও প্রশাসনিক অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। কিন্তু তারপরও হামাস কিংবা অন্য প্রতিরোধ গোষ্ঠীকে গাজার সাধারণ মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব হয়নি। কারণ এই লড়াই এখন শুধুই একটি রাজনৈতিক দলের নয়, এটি এক জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই।

বিশ্লেষকদের মতে, ৭ অক্টোবরের হামলার মধ্য দিয়ে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের বাস্তবতা চিরতরে বদলে গেছে। ইসরায়েল যদি চায় শান্তি, তবে তাদের কৌশল বদলাতে হবে। কারণ হামাস বা গাজার প্রতিরোধ এখন কেবল অস্ত্রধারী গোষ্ঠী নয়, এটি এক আদর্শিক অবস্থান, যা দমন নয়, বরং সমঝোতার মাধ্যমেই মোকাবিলা করা সম্ভব।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here