খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)–এ চলমান উত্তপ্ত আন্দোলনের অবসান ঘটেছে উপাচার্য ড. মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে। প্রায় ৫৮ ঘণ্টা টানা আমরণ অনশন চালিয়ে আসা শিক্ষার্থীরা গতকাল রাত ১টার দিকে অনশন ভাঙেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান নিজ হাতে জুস পান করিয়ে এই অনশন ভাঙান।
অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন শিক্ষার্থীদের সামনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বার্তা পাঠ করেন, যেখানে জানানো হয়, “সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে কুয়েটের উপাচার্য ও সহ উপাচার্যকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে এবং জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের মধ্য থেকে একজনকে সাময়িক দায়িত্ব প্রদান করা হবে।” এই ঘোষণা শুনেই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উল্লাসে ফেটে পড়েন এবং ‘আমরা জিতেছি’ স্লোগানে মুখরিত হয় ক্যাম্পাস।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মূল দাবি ছিল উপাচার্য মাছুদের পদত্যাগ এবং ১৪ এপ্রিল বহিষ্কৃত ৩৭ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার। উভয় দাবিই পূরণ হওয়ায় শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন।
এর আগে, বুধবার সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে কুয়েট ক্যাম্পাসে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার। তিনি শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙার অনুরোধ জানালেও শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত তাদের অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন।
একই দিন শিক্ষক সমিতি এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানায়, চাপের মুখে উপাচার্যের অপসারণ মেনে নেওয়া হবে না। তবে ইউজিসির গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি এদিনই কুয়েট এসে সকল পক্ষের বক্তব্য শোনে এবং পরে সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার ও আবাসিক হল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ৪ মে থেকে পূর্বঘোষিত সময় অনুযায়ী ক্লাস শুরুর ঘোষণাও বহাল রাখা হয়।
উল্লেখ্য, ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে উত্তাল হয়ে ওঠে কুয়েট ক্যাম্পাস। পরদিনই সব একাডেমিক ভবন তালাবদ্ধ করে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন এবং ২৫ ফেব্রুয়ারি আবাসিক হলগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
পরবর্তীতে হল খুলে দেওয়ার দাবিতে ১৩ এপ্রিল থেকে অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়, যা গড়ায় আমরণ অনশনে। অবশেষে প্রশাসনের সিদ্ধান্ত পাল্টানো এবং উপাচার্যের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ আন্দোলনের সফল পরিসমাপ্তি ঘটে।