ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানো এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচার দাবিতে দেশের রাজনীতি ফের সরগরম হয়ে উঠেছে। ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে টানা ছয় দিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে, ছাত্রদলের পক্ষ থেকেও সাম্যের হত্যার বিচার দাবিতে কঠোর কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
বিএনপি মনে করছে, এই দুটি ইস্যু এখন দলের কৌশলগত অবস্থান নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ধরন, বিভিন্ন সংগঠনের দাবির প্রতি ইতিবাচক সাড়া এবং বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির প্রতি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্লেষণ করে দেখছে দলটি।
গত সোমবার গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই ইস্যুগুলো বিশেষ গুরুত্ব পায়। বৈঠকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে নেতারা উল্লেখ করেন, “সরকার অনেক ছোট ছোট গোষ্ঠীর দাবি মেনে নিচ্ছে, অথচ আদালতের রায় থাকা সত্ত্বেও ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানো হচ্ছে না—এটা রহস্যজনক।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “ঢাকাবাসীর আন্দোলন এখনো সাধারণ মানুষের সমর্থন পাচ্ছে। সরকারের অনড় অবস্থানের কারণে আমাদের দলীয়ভাবে মাঠে নামার সময় ঘনিয়ে আসছে।”
বৈঠকে বিএনপি নেতারা মনে করেন, যদি সরকার ইশরাক হোসেনের শপথ ও সাম্য হত্যার বিচার নিয়ে উদাসীনতা দেখায়, তবে তা সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবকে প্রমাণ করবে। নেতারা স্পষ্ট করেন, “যদি এসব দাবি উপেক্ষিত হয়, তাহলে বিএনপি পুরো শক্তি নিয়ে আন্দোলনে নামবে।”
এছাড়া, বৈঠকে আলোচনায় আসে, সম্প্রতি কিছু সংগঠন যেমন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দাবি সরকার সহজেই মেনে নিয়েছে। তাহলে বিএনপির মতো বৃহৎ রাজনৈতিক দলের ন্যায্য দাবিতে সরকার নিরব—এমন অবস্থান অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করছেন তারা।
জুলাই সনদ, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন, নতুন সংবিধান এবং সম্ভাব্য গণভোট নিয়েও বৈঠকে বিস্তর আলোচনা হয়। নেতারা মনে করছেন, নতুন সংবিধান প্রণয়নের প্রস্তাব মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী এবং এতে জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরাতে পারে।
বিএনপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, “সংবিধানে সংস্কার আনা যায়, তবে তা সবাইকে নিয়ে। কিন্তু নতুন সংবিধানের কোনো যৌক্তিকতা নেই।”
অন্যদিকে দলের সাংগঠনিক কাঠামো মজবুত করতে সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। আলোচিত বক্তব্য—যেখানে আওয়ামী লীগের ‘ভালো নেতাকর্মীদের’ বিএনপিতে আহ্বানের প্রসঙ্গ উঠে আসে—নিয়েও মতবিনিময় হয়।
বৈঠকে নেতারা একমত হন, তারেক রহমানের প্রতিদিনের বক্তব্য দলের কৌশল নির্ধারণে সহায়ক। সেই বক্তব্যকে মাঠ পর্যায়ে আরও ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
বিএনপি মনে করছে, জুলাই সনদ কেন্দ্র করে নতুন অস্থিরতা তৈরি হতে পারে, যা মোকাবিলা করা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে। আর এই অস্থিরতা মোকাবিলায় সরকার ব্যর্থ হলে, তা জুলাই আন্দোলনে যুক্ত সব পক্ষের ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত হবে বলে মত দিয়েছেন নেতারা।