ওয়াশিংটন, ৫ মার্চ: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তা অস্থায়ীভাবে স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছেন। গত সপ্তাহে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বাগবিতণ্ডার জেরে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা।
রয়টার্স ও আল-জাজিরা‘র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের যেসব সামরিক সরঞ্জাম এখনো ইউক্রেনে পৌঁছায়নি, সেগুলোর সরবরাহ আপাতত বন্ধ রাখা হবে। এর মধ্যে রয়েছে বিমান ও জাহাজে পরিবহনযোগ্য অস্ত্রশস্ত্র, যা ইউক্রেনে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত ছিল, পাশাপাশি পোল্যান্ডে অপেক্ষমাণ সামরিক সরঞ্জাম।
হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শান্তির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। আমরা চাই, আমাদের মিত্ররাও সেই লক্ষ্যেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকুক। সামরিক সহায়তা স্থগিত করার মাধ্যমে আমরা একটি সমাধানের পথে যেতে চাই।”
সামরিক সহায়তা স্থগিতের নির্দেশ
এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ-কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তবে কতদিন এই সহায়তা স্থগিত থাকবে, সে সম্পর্কে হোয়াইট হাউস বা পেন্টাগন এখনো বিস্তারিত কিছু জানায়নি।
রয়টার্স ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করলেও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। একইভাবে, ওয়াশিংটনে অবস্থিত ইউক্রেনীয় দূতাবাসও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
ট্রাম্প-জেলেনস্কির সম্পর্কের টানাপোড়েন
ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে মার্কিন নীতি বদলানোর আভাস দেন। তিনি মস্কোর প্রতি আগের চেয়ে আরও সমঝোতামূলক অবস্থান গ্রহণ করেন এবং ইউক্রেনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখান।
সর্বশেষ গত শুক্রবার হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের জন্য অপর্যাপ্ত কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অভিযোগ তুলে তীব্র সমালোচনা করেন ট্রাম্প।
এদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রবিবার অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “নিকট ভবিষ্যতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এখনো কোনো পক্ষই শান্তি চুক্তির জন্য কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি।”
জেলেনস্কির এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লেখেন, “জেলেনস্কির এটি ছিল সবচেয়ে জঘন্য মন্তব্য। যুক্তরাষ্ট্র আর এসব সহ্য করবে না। যতদিন মার্কিন সমর্থন থাকবে, ততদিন সে (জেলেনস্কি) ইউক্রেনে শান্তি চাইবে না।”
মার্কিন সমর্থন কমে গেলে ইউক্রেন কী করবে?
তিন বছর আগে রাশিয়া যখন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে পূর্ণমাত্রায় আক্রমণ শুরু করে, তখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রই ইউক্রেনের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ। তবে সাম্প্রতিক এই সিদ্ধান্তে ইউক্রেনের সামরিক অবস্থান কতটা দুর্বল হবে, তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই নীতিগত পরিবর্তন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ পরিস্থিতির ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।