গ্যাস সংকট মোকাবিলায় ১০০টি নতুন কূপ খননের উদ্যোগ

0
26

দেশের গ্যাস সংকট ক্রমাগত তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠছে। চাহিদার তুলনায় অর্ধেক গ্যাস সরবরাহের ফলে শিল্প, ব্যবসা এবং সাধারণ জনগণ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ গ্যাস সরবরাহ কমে আসা ও পর্যাপ্ত পরিমাণে এলএনজি আমদানি করতে না পারায় সংকট আরও প্রকট হচ্ছে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার নতুন করে ১০০টি কূপ খননের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে নেওয়া হয়েছে।

গ্যাস কূপ খননের পরিকল্পনা ও বর্তমান অবস্থা

পেট্রোবাংলার তথ্য অনুসারে, বিদ্যমান ৫০টি কূপ খননের পাশাপাশি নতুন করে ১০০টি কূপ খনন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৬৯টি হবে অনুসন্ধান কূপ এবং ৩১টি হবে ওয়ার্কওভার কূপ। সরকার আশা করছে, যদি নির্ধারিত কূপগুলোর খনন সফলভাবে সম্পন্ন হয়, তাহলে দৈনিক প্রায় ৯৮৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হবে। আর ওয়ার্কওভার কার্যক্রমের মাধ্যমে দৈনিক আরও ২১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হবে জাতীয় গ্রিডে।

বর্তমানে ৫০টি কূপ খননের কাজ চলমান রয়েছে, যার মধ্যে ১৬টি কূপের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এসব কূপ থেকে মোট ১৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সন্ধান মিলেছে, যা জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে। পেট্রোবাংলা আশা করছে, নতুন কূপ খনন কার্যক্রম সফল হলে ২০২৯ সাল নাগাদ দেশে গ্যাসের সংকট অনেকাংশে কমে আসবে।

আর্থিক বরাদ্দ ও সম্ভাব্য খরচ

১০০টি কূপ খননের জন্য বিশাল অঙ্কের বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এ খাতে প্রায় ৩,৩০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। ২০২৬-২৭ অর্থবছরে এই খরচ দাঁড়াবে ৪,২০০ কোটি টাকা। ২০২৭-২৮ অর্থবছরে খরচ হবে ৫,৫৬০ কোটি টাকা, এবং ২০২৮-২৯ অর্থবছরে এই খরচ ৬,০০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। মোট হিসেব অনুযায়ী, পুরো প্রকল্পে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১৩,৩৫০ কোটি টাকা এবং গ্যাস উন্নয়ন তহবিল থেকে ৫,৭৫০ কোটি টাকা ব্যয় হবে।

বাপেক্স ও অন্যান্য কোম্পানির দায়িত্ব

এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য দেশের তিনটি গ্যাস উত্তোলন কোম্পানি কাজ করবে। এর মধ্যে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) ৬৯টি কূপ খননের দায়িত্ব পালন করবে। বাকি ৩১টি কূপ খননের কাজ করবে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (বিজিএফসিএল) ও সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল)।

গ্যাস সংকট নিরসনে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

বর্তমানে দেশে গ্যাসের চাহিদা ৫,০০০ মিলিয়ন ঘনফুট হলেও সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে মাত্র ২,৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এই ঘাটতি মোকাবিলার জন্য সরকার আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধানে জোর দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি দ্বি-মাত্রিক ও ত্রি-মাত্রিক জরিপ পরিচালনা করে আরও কার্যকর কূপ খনন করা হয়, তবে দীর্ঘমেয়াদে দেশীয় গ্যাস উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।

পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা জানান, ভোলা, হাতিয়া, সন্দ্বীপসহ উপকূলীয় এলাকাগুলোতে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এই এলাকাগুলোতে আরও অনুসন্ধান চালিয়ে যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ করলে গ্যাস সংকট অনেকাংশে লাঘব হতে পারে।

উপসংহার

দেশের ক্রমবর্ধমান গ্যাস সংকট মোকাবিলায় সরকারের নেওয়া ১০০টি কূপ খননের উদ্যোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। যদি এই প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয়, তাহলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে গ্যাসের সরবরাহ বাড়বে এবং আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা কমবে। তবে এর কার্যকারিতা নির্ভর করবে প্রকল্প বাস্তবায়নের গতির ওপর।


 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here