রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রেখে প্রশাসন পরিচালনার নীতিতে অটল থাকার গুরুত্ব অপরিসীম। সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিককে বৈষম্যহীনভাবে সেবা প্রদান করা সরকারি কর্মচারীদের অন্যতম দায়িত্ব। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিতর্কিত নির্বাচনের ঘটনাগুলোর প্রেক্ষিতে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি প্রশাসন ও পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিতর্কিত ভূমিকা রাখা জেলা প্রশাসকের (ডিসি) দায়িত্ব পালনকারী ২২ কর্মকর্তাকে গত বৃহস্পতিবার অবসরে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া আরও অনেক কর্মকর্তাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়েছে এবং কিছু কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সূত্রমতে, বিতর্কিত নির্বাচন ও প্রশাসনিক অসংগতির তদন্তের অংশ হিসেবে ২০১৮ সালের নির্বাচনে পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে দায়িত্ব পালনকারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর মধ্যে আলোচনাও চলছে।
নির্বাচন ব্যবস্থায় প্রশাসনের ভূমিকা
স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রশাসনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ভোটকেন্দ্র স্থাপন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ভোটগ্রহণ ও গণনার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ সরকারি কর্মকর্তাদের উপর ন্যস্ত থাকে। গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে প্রশাসনের নিরপেক্ষ আচরণ আবশ্যক। তবে পূর্ববর্তী কিছু নির্বাচনে সরকারি কর্মচারীদের নিরপেক্ষতা নিয়ে বিতর্ক হয়েছে।
২০১৮ সালের নির্বাচনে ১০৩টি আসনের ২১৩টি ভোটকেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়ার তথ্য সামনে আসে। এ ধরনের অস্বাভাবিক ফলাফলের কারণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে তদন্তের দাবি জোরালো হয়েছে।
ভবিষ্যৎ কার্যক্রম ও প্রশাসনিক সংস্কার
অন্তর্বর্তী সরকার সরকারি প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। সরকারি চাকরিবিধি অনুসারে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে কোনো নির্বাচন বিতর্কিত না হয়, সে জন্য প্রশাসনিক ব্যবস্থার কঠোর পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
জনগণের আস্থা ফেরাতে সরকারি কর্মকর্তাদের কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। তাই এই উদ্যোগকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সুষ্ঠু প্রশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকারি কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে অন্তর্বর্তী সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে।