বাংলাদেশ থেকে ভারতে আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ‘শরণার্থী’ আখ্যা দিয়ে তাদের রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা ও বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী।
রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় কলকাতার ভারতীয় জাদুঘরের এবিসি অডিটোরিয়ামে ‘খোলা হাওয়া’ সংগঠনের আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ইন ক্রাইসিস’ শীর্ষক এক আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক ও ভারতীয় হিসেবে আমি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করব, আওয়ামী লীগ করার অপরাধে বা হিন্দু হওয়ার কারণে যারা বাংলাদেশ থেকে ভারতে পালিয়ে এসেছেন, তাদের দয়া করে জেলে পুরবেন না। অতীতে বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে ভারত আশ্রয় দিয়েছে। এবারও মানবিকতা দেখাতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “যেসব আওয়ামী লীগ নেতার পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়েছে, তাদেরও গ্রেপ্তার করা উচিত নয়। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা রোহিঙ্গা নন।”
বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “আগামী ছয় মাসের মধ্যে যদি বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়, আমি অবাক হব না। কারণ, দেশটি কার্যত পাকিস্তানই পরিচালনা করছে।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশে এখন মৌলবাদী সরকার ক্ষমতায়। বিএনপি বা জাতীয় পার্টির কোনো ভূমিকা নেই। আওয়ামী লীগ তো ছেড়েই দিন, এমনকি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকদেরও টার্গেট করা হচ্ছে। পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত ঢাকায় না বসে সারাদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন, জামাতের অফিসে গিয়ে বৈঠক করছেন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানকে যারা সমর্থন করেছিল, তারাই এখন দেশ চালাচ্ছে।”
বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে তিনি বলেন, “আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সনাতনী হিন্দুদের শূন্য করে ফেলা হতে পারে। মুক্তিযুদ্ধের সমর্থকদের সরকারি চাকরি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। এমনকি বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোনো ভাস্কর্য নেই, গান্ধীজির স্মারক ভাঙা হয়েছে।”
তিনি দাবি করেন, “৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান অস্বীকার করা হচ্ছে। ইন্দিরা গান্ধীর নামে থাকা লাইব্রেরিও ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে একদিন বাংলাদেশ পার্লামেন্টে ঘোষণা করবে—পাকিস্তানের সঙ্গে বিভাজন ছিল ভুল, আমরা পুনরায় সংযুক্ত হতে চাই।”
শুভেন্দু অধিকারীর এই মন্তব্যের পরপরই ভারতে এবং বাংলাদেশে রাজনৈতিক মহলে আলোচনার ঝড় ওঠে। বাংলাদেশের সরকারি ও বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না এলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তার বক্তব্য দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে।