Home জাতীয় সিএনজিচালিত অটোরিকশা সেবায় নৈরাজ্য: আন্দোলনের নামে নগরবাসী জিম্মি

সিএনজিচালিত অটোরিকশা সেবায় নৈরাজ্য: আন্দোলনের নামে নগরবাসী জিম্মি

0
42

মূল বিষয়:

  • বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়া কার্যকর করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন
  • রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চালকদের সড়ক অবরোধ, নগরবাসীর দুর্ভোগ
  • মালিকদের অতিরিক্ত জমা আদায় ও চালকদের ভাড়া বৃদ্ধির দাবি
  • সরকার আইন প্রয়োগের চেষ্টা করলেও আন্দোলনের মুখে নতি স্বীকার

ঢাকা মহানগরীতে গণপরিবহন ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরেই বিশৃঙ্খলার শিকার। এর মধ্যে সিএনজিচালিত অটোরিকশা সেবা নাগরিক দুর্ভোগের অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে। বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়ার বাইরে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, যাত্রীদের যাতায়াতের স্বাধীনতা খর্ব করা এবং চালকদের স্বেচ্ছাচারী আচরণ নগরবাসীর দৈনন্দিন জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। সরকারি নিয়মনীতি কার্যকর করতে গেলেই চালক-মালিকদের আন্দোলন নগরজীবনে নতুন সংকট তৈরি করে।

নির্ধারিত ভাড়া কার্যকর করতে ব্যর্থতা

বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ী, সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া মিটারে নির্ধারিত হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে এটি কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। চালকরা নির্ধারিত ভাড়া মানতে নারাজ এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দ্বিগুণ বা তার চেয়েও বেশি ভাড়া দাবি করেন। অনেক সময় নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে সরাসরি অস্বীকৃতি জানান চালকরা। ফলে যাত্রীরা বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধ করতে বাধ্য হন।

মালিক ও চালকদের অসহযোগিতা

অটোরিকশার চালকরা অভিযোগ করেন যে, মালিকরা তাদের কাছ থেকে প্রতিদিন বিআরটিএ নির্ধারিত জমার চেয়ে বেশি অর্থ দাবি করেন। সরকার নির্ধারিত জমা যেখানে প্রতিদিন ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা হওয়ার কথা, সেখানে মালিকরা দাবি করেন ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত। ফলে চালকরা বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়া আদায় করেন এবং যাত্রীদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন।

চালকদের আন্দোলন ও নগরজীবনে বিপর্যয়

বিআরটিএ কঠোরভাবে ভাড়া নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিলে চালকরা আন্দোলনে নামেন। তারা রাস্তায় নেমে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন, যা নগরজীবনকে স্থবির করে তোলে। এই আন্দোলনের কারণে অফিসগামী মানুষ, শিক্ষার্থীরা এবং রোগীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হন। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোতে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়, যা সাধারণ জনগণের জন্য নতুন ভোগান্তির সৃষ্টি করে।

সড়ক পরিবহন আইনের প্রয়োগ ও ভবিষ্যৎ করণীয়

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই সমস্যার সমাধানের জন্য সরকারের উচিত কঠোরভাবে সড়ক পরিবহন আইন প্রয়োগ করা। নির্দিষ্ট নীতিমালার মাধ্যমে মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে সুস্পষ্ট নিয়ম চালু করতে হবে। একইসঙ্গে, সিএনজিচালিত অটোরিকশা সেবাকে কোনো বড় কোম্পানির আওতায় এনে একটি নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থার মধ্যে আনলে এই বিশৃঙ্খলা অনেকাংশে কমানো সম্ভব হবে।

সিএনজির উপর নির্ভরতা কমানোর বিকল্প ব্যবস্থা

সিএনজিচালিত অটোরিকশার উপর নির্ভরতা কমাতে সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে বিকল্প পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত করার উদ্যোগ নিতে হবে। ঢাকায় রিকশার পাশাপাশি বাস সার্ভিস বাড়ানো, অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবা সম্প্রসারণ এবং ইলেকট্রিক যানবাহনের ব্যবহার বাড়ানো গেলে সিএনজির উপর নির্ভরতা হ্রাস পাবে।

জনগণের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ

শুধু সরকার নয়, নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে। অতিরিক্ত ভাড়া চাওয়ার ক্ষেত্রে যাত্রীরা যদি নিয়মিত অভিযোগ জানায় এবং বিআরটিএর হটলাইনে রিপোর্ট করে, তবে সিএনজি চালকদের স্বেচ্ছাচারিতা কিছুটা কমতে পারে।

সিএনজিচালিত অটোরিকশার নৈরাজ্য বন্ধে সরকারের পাশাপাশি মালিক-চালকদেরও দায়িত্ব নিতে হবে। ভাড়া নিয়ন্ত্রণে কঠোরতা বজায় রাখা, আইন প্রয়োগ করা এবং বিকল্প পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন করা গেলে এই সমস্যা অনেকাংশে সমাধান হতে পারে। জনগণের যাতায়াত সুবিধাজনক করতে হলে সরকার, পরিবহন সংস্থা এবং নাগরিকদের সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here