দীর্ঘদিনের পলাতক চট্টগ্রামের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদকে অবশেষে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি থেকে তাকে আটক করা হয়।
গতকাল শনিবার রাতে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) একটি বিশেষ দল গোপন অভিযানের মাধ্যমে ঢাকার বসুন্ধরা সিটি থেকে ছোট সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম শাখার উপ-কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, সাজ্জাদের বিরুদ্ধে ঢাকায় কোনো মামলা না থাকলেও চট্টগ্রামে একাধিক মামলা রয়েছে। তাকে সিএমপি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে।
প্রযুক্তিগত নজরদারিতে ধরা ছোট সাজ্জাদ
পুলিশ জানায়, গত ৪-৫ মাস ধরে প্রযুক্তিগত নজরদারির মাধ্যমে ছোট সাজ্জাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছিল। অবশেষে, পুলিশ সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার সহায়তায় তার অবস্থান শনাক্ত করা হয়। বসুন্ধরা সিটিতে ঈদের কেনাকাটা করতে গেলে আগে থেকেই ওঁত পেতে থাকা সিএমপি পুলিশের একটি বিশেষ দল তাকে গ্রেপ্তার করে। এরপর, ৩০ মিনিটের মধ্যে তেজগাঁও থানার পুলিশের একটি দল এসে তাকে থানায় নিয়ে যায়।
ভয়ঙ্কর অপরাধের ইতিহাস
ছোট সাজ্জাদ চট্টগ্রামের হাটহাজারী, বায়েজিদ বোস্তামী, চান্দগাঁও ও পাঁচলাইশ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছিল। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজি ও পুলিশের ওপর হামলার মতো ১০টিরও বেশি মামলা রয়েছে।
তিনি চট্টগ্রামের কুখ্যাত ‘এইট মার্ডার মামলার’ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সাজ্জাদ আলী খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। বিদেশে অবস্থানরত সাজ্জাদ আলী খান চাঁদাবাজি ও হত্যাকাণ্ড পরিচালনার জন্য ছোট সাজ্জাদকে ব্যবহার করতেন।
হত্যাকাণ্ড ও সহিংসতার দীর্ঘ তালিকা
- ২০২৩ সালের ২৮ জানুয়ারি বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কে প্রকাশ্যে গুলি করে মাসুদ কায়সার ও মোহাম্মদ আনিসকে হত্যা।
- ২০২৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর চান্দগাঁও থানার অদূরপাড়া এলাকায় ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিন তাহসীনকে গুলি করে হত্যা।
- ২০২৩ সালের ৫ জুলাই বায়েজিদ থানার বুলিয়াপাড়া এলাকায় বাসায় ঢুকে গুলি চালানো।
- ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর চান্দগাঁও হাজীরপুল এলাকায় ঠিকাদার মো. হাসানের বাসায় গুলি।
- ২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর অক্সিজেন মোড়ে পুলিশের ওপর গুলি চালিয়ে পালিয়ে যাওয়া।
পুলিশের ওপর হামলা ও ফেসবুক লাইভে হুমকি
২০২৩ সালের ১৭ জুলাই চান্দগাঁও থানা পুলিশ অস্ত্রসহ সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করেছিল। তবে জামিনে বেরিয়ে আসার পর, ৪ ডিসেম্বর নগরের অক্সিজেন এলাকায় পুলিশ তাকে ধরতে গেলে তিনি গুলি ছুড়ে পালিয়ে যান, এতে পুলিশসহ পাঁচজন আহত হন।
এরপর, ২০২৪ সালের ২৮ জানুয়ারি ফেসবুক লাইভে এসে তিনি বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি আরিফুর রহমানকে পেটানোর হুমকি দেন। এ ঘটনার পরেই চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার তার বিরুদ্ধে পুরস্কার ঘোষণা করেন।
গ্রেপ্তারের পরবর্তী পদক্ষেপ
সিএমপি পুলিশের উত্তর জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) আমিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ছোট সাজ্জাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বের করা হবে। তাকে দ্রুত চট্টগ্রামে নেওয়া হচ্ছে এবং তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে পরে জানানো হবে।
চট্টগ্রামে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা কুখ্যাত এই সন্ত্রাসী ধরা পড়ায় নগরবাসী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সাজ্জাদের গ্রেপ্তারের ফলে চট্টগ্রামের অপরাধচক্র অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়বে।