বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় দণ্ডিত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায় আজ রবিবার ঘোষণা করবে হাইকোর্ট।
বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ মামলার রায় ঘোষণার জন্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়েছিল।
মামলার পটভূমি
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শেরে বাংলা হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। ভারতের সঙ্গে করা একটি ‘অসম চুক্তি’ নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার কারণে তাকে টার্গেট করা হয়। রাত ৩টার দিকে হলের সিঁড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
ঘটনার পরদিন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ চকবাজার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে মাত্র ৩৭ দিনের মধ্যে, ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর, গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়।
আগের রায় ও হাইকোর্টে আপিল
২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান এ মামলায় ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।
২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি মামলার ডেথ রেফারেন্স উচ্চ আদালতে আসে। এদিকে, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হাইকোর্টে আপিল করেন। আজকের রায়ে আসামিদের সাজা বহাল থাকবে, না কি পরিবর্তন হবে, তা জানা যাবে।
আসামিদের সাজা ও বর্তমান অবস্থা
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২০ আসামি:
- মেহেদী হাসান রাসেল
- মো. অনিক সরকার (অপু)
- মেহেদী হাসান রবিন (শান্ত)
- ইফতি মোশাররফ সকাল
- মো. মনিরুজ্জামান মনির
- মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন
- মো. মাজেদুর রহমান মাজেদ
- মো. মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ
- খন্দকার তাবাকারুল ইসলাম (তানভির)
- হোসেন মোহাম্মদ তোহা
- মো. শামীম বিল্লাহ
- মো. সাদাত এএসএম নাজমুস সাদাত
- মুনতাসির আল জেমী
- মো. মিজানুর রহমান মিজান
- এসএম মাহমুদ সেতু
- সামসুল আরেফিন রাফাত
- মো. মোর্শেদ (অমর্ত্য ইসলাম)
- এহতেশামুল রাব্বি (তানিম) (পলাতক)
- মোহাম্মদ মোর্শেদ উজ্জামান মণ্ডল (জিসান) (পলাতক)
- মুজতবা রাফিদ (পলাতক)
যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত ৫ আসামি:
- অমিত সাহা
- ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না
- মো. আকাশ হোসেন
- মুহতাসিম ফুয়াদ
- মো. মোয়াজ (মোয়াজ আবু হোরায়রা)
রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য
রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জসিম সরকার, খন্দকার বাহার রুমি, নূর মুহাম্মদ আজমীসহ অন্যান্যরা শুনানিতে অংশ নেন।
অন্যদিকে, আসামিপক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এসএম শাহজাহান, আজিজুর রহমান দুলু, মাসুদ হাসান চৌধুরী ও মোহাম্মদ শিশির মনির শুনানি করেন।
কী হতে পারে রায়ে?
আজকের রায়ে নিম্ন আদালতের দেওয়া সাজা বহাল থাকতে পারে, দণ্ড পরিবর্তন হতে পারে, কিংবা আসামিদের কিছু সংখ্যার শাস্তি কমানো বা বাড়ানো হতে পারে। তবে এই রায় দেশের বিচার ব্যবস্থার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
সার্বিক প্রতিক্রিয়া
আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাধারণ জনগণের মধ্যে এই রায় নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে।
নির্যাতনের শিকার হয়ে একজন মেধাবী শিক্ষার্থীর প্রাণ হারানোর ঘটনায় কঠোর বিচার দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনও হয়েছিল। আজকের রায়ের মাধ্যমে বিচারপ্রক্রিয়ার শেষ ধাপে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে।