মহাকাশযানের ত্রুটির কারণে ৯ মাস ধরে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে আটকে থাকা মার্কিন নভোচারী সুনিতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোর অবশেষে পৃথিবীতে ফিরছেন। আগামীকাল বুধবার তাদের ফেরার কথা রয়েছে।
মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা জানিয়েছে, দীর্ঘ অপেক্ষার পর নভোচারীদের ফিরিয়ে আনার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে স্পেসএক্সের ক্রু ড্রাগন মহাকাশযানের মাধ্যমে তাদের ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
কীভাবে আটকে পড়েছিলেন সুনিতা ও বুচ?
২০২৩ সালের জুন মাসে বোয়িংয়ের স্টারলাইনার মহাকাশযানে করে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (ISS) যান সুনিতা ও বুচ। তাদের পরিকল্পনা ছিল স্বল্প সময়ের মধ্যে পৃথিবীতে ফিরে আসার। কিন্তু স্টারলাইনার মহাকাশযানে বড় ধরনের প্রযুক্তিগত ত্রুটি ধরা পড়ে, যার ফলে নভোচারীদের পৃথিবীতে ফেরত আনার পরিকল্পনা বারবার বিলম্বিত হয়। শেষ পর্যন্ত নাসা স্টারলাইনারকে খালি অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয় এবং নতুন একটি মিশনের মাধ্যমে সুনিতা ও বুচকে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়।
ক্রু-১০ মিশনের মাধ্যমে ফেরার প্রস্তুতি
নাসা ও স্পেসএক্সের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত ক্রু-১০ মিশন নভোচারীদের ফেরানোর মূল পরিকল্পনা তৈরি করে। গত শুক্রবার (১৫ মার্চ) গ্রিনিচ মান সময় রাত ১১টা ৩ মিনিটে ফ্লোরিডার কেনেডি মহাকাশ কেন্দ্র থেকে স্পেসএক্সের ক্রু ড্রাগন মহাকাশযান যাত্রা শুরু করে এবং ২৯ ঘণ্টা পর আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছায়।
এই মিশনে চারজন নতুন নভোচারী মহাকাশ কেন্দ্রে যান। তারা হলেন—
✅ অ্যান ম্যাকক্লেইন (নাসার নভোচারী)
✅ নিকোল আয়ার্স (নাসার নভোচারী)
✅ তাকুয়া অনিশি (জাপানের মহাকাশ সংস্থার নভোচারী)
✅ কিরিল পেসকভ (রাশিয়ার নভোচারী)
এই চার নভোচারী প্রায় ছয় মাস মহাকাশ স্টেশনে অবস্থান করবেন এবং সেখানে থাকা বর্তমান ক্রুদের দায়িত্ব বুঝে নেবেন।
সুনিতা ও বুচের সঙ্গে ফিরছেন আরও দুই নভোচারী
নভোচারী অদলবদলের অংশ হিসেবে এবার মহাকাশ স্টেশন থেকে ফেরার জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটে সুনিতা ও বুচের সঙ্গে থাকবেন আরও দুইজন। তারা হলেন—
✅ নিক হেগ (নাসার নভোচারী)
✅ আলেকসান্দর গরবুনোভ (রাশিয়ার নভোচারী)
এই দুই নভোচারী ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ক্রু ড্রাগন মহাকাশযানে করে মহাকাশ স্টেশনে গিয়েছিলেন এবং তখন থেকেই যানটি সেখানে সংযুক্ত ছিল, যাতে সুনিতা ও বুচ ফেরার সময় ব্যবহার করতে পারেন।
নভোচারীদের ফেরার চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু
নাসার সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে দেখা গেছে, ক্রু ড্রাগন মহাকাশযানের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে এবং ধাপে ধাপে এটি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর মহাকাশযানটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করবে এবং পূর্বনির্ধারিত স্থানে অবতরণ করবে।
দীর্ঘ মহাকাশ মিশনের পর কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবেন তারা?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘ ৯ মাস শূন্য মাধ্যাকর্ষণে থাকার ফলে নভোচারীদের শরীরে নানা শারীরিক পরিবর্তন ঘটতে পারে। বিশেষ করে—
🩺 হাড় ও পেশির দুর্বলতা
🩺 রক্ত সঞ্চালনের পরিবর্তন
🩺 ব্যালান্স ও দৃষ্টিশক্তির সমস্যা
তাই পৃথিবীতে ফিরে আসার পর সুনিতা, বুচ ও তাদের সহযাত্রীদের বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে এবং পুনর্বাসন প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।
শেষ কথা
৯ মাস পর অবশেষে সুনিতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোরের পৃথিবীতে ফেরার জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। নাসার নিয়ন্ত্রিত পরিকল্পনার মাধ্যমে তাদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পৃথিবীতে ফেরার পর তারা কীভাবে অভিযোজন করবেন এবং মহাকাশ গবেষণায় তাদের অভিজ্ঞতা কীভাবে কাজে লাগবে, তা নিয়ে বিজ্ঞানী ও গবেষকদের আগ্রহ এখন তুঙ্গে।