নির্বাচন কমিশনকে ‘আওয়ামী লীগের আজ্ঞাবহ’ ও ‘বিতর্কিত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান’ বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি।
১৮ ডিসেম্বর থেকে জাতীয় নির্বাচনের ভোট গ্রহণের আগপর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি আয়োজনের অনুমতি না দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ সময় শুধু ভোটের প্রচার চালানো যাবে। গত মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবকে পাঠানো এক চিঠিতে এ অনুরোধ জানানো হয়।সেই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েই বিএনপি বলেছে, এটি নজিরবিহীন ও গণবিরোধী সিদ্ধান্ত। আজ বৃহস্পতিবার বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষর করা এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়।
বিএনপির ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ৭ জানুয়ারি (২০২৪) একটি তথাকথিত নির্বাচনের নামে ভাগ-বাঁটোয়ারার মাধ্যমে ডামি নির্বাচন আয়োজনের যে অপপ্রয়াস, সেটিকে পৃষ্ঠপোষকতা করতেই অথর্ব ও অযোগ্য নির্বাচন কমিশন জনবিদ্বেষী সিদ্ধান্তটি নিয়েছে। প্রকারান্তরে এটি আবারও প্রমাণিত হয়েছে, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপর কেন সর্বজনীন অনাস্থা ও বিশ্বাসহীনতা বিরাজমান এবং সর্বাঙ্গীণভাবে পক্ষপাতদুষ্ট এই কমিশনের অধীনে কেন কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা ফেয়ার ইলেকশন সম্ভব নয়।
রিজভীর দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, জনগণের মুক্তি ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে দমিয়ে রাখতে দুঃশাসন, দুর্নীতি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধিতে মানুষের ভয়াবহ দুর্গতির মধ্যে নীলনকশার এই অন্যায় পদক্ষেপকে গণতন্ত্রের পক্ষের সব শক্তি ঘৃণাভরে ধিক্কার জানাচ্ছে। ইতিপূর্বে নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন এবং ভুয়া প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচনী পর্যবেক্ষক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্দেশনা প্রতিপালন করেছে মেরুদণ্ডহীন নির্বাচন কমিশন। জনগণের কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় তথাকথিত রাজনৈতিক দল সৃষ্টি করে নির্বাচনকে কিঞ্চিৎ অংশগ্রহণমূলক দেখানোর যে অপকৌশল এবং সেটিকে বৈধতা প্রদানে দেশি-বিদেশি ভাড়াটে পর্যবেক্ষক এনে দেশবাসীর সঙ্গে যে নির্লজ্জ মিথ্যাচার, আওয়ামী লীগ ও নির্বাচন কমিশনের এই যৌথ প্রতারণা জাতির সামনে সুস্পষ্টভাবে উন্মোচিত হয়েছে।
বিএনপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা রাজনৈতিক কর্মসূচি বন্ধের নব্য অপতৎপরতায় উদ্বেগ প্রকাশ করছি ও নিন্দা জানাচ্ছি। গণতান্ত্রিক মতপ্রকাশের অধিকারকে রুদ্ধ করার এই অশুভ উদ্যোগ বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক, অর্থনীতিক ও কূটনীতিক সংকটকে আরও ঘনীভূত করবে।’ রিজভী বিবৃতিতে বলেন, ‘বিএনপি কখনোই নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিপক্ষে নয়। কারণ, আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে সেটিতে বিএনপির বিপুল বিজয় অনিবার্য ও অবশ্যম্ভাবী।’
বিএনপির বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘সব গণতন্ত্রমনা রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে বিএনপি যুগপৎ আন্দোলন পরিচালনা করছে। গণমানুষের প্রেরণায়, তাঁদের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে, পরিকল্পিত ভাগ-বাঁটোয়ারার নির্বাচনকে বর্জন করেছে বিএনপিসহ ৬৩টি রাজনৈতিক দল। ১২ কোটি ভোটারের ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আমাদের এই শান্তিপূর্ণ ও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে, আরও বেগবান হবে।’