বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি ও সাবেক সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে, যা নিয়ে দেশ-বিদেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকার একটি আদালত গত রবিবার একটি দুর্নীতির মামলায় টিউলিপ সিদ্দিক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আরও ৫১ জনের বিরুদ্ধে এ পরোয়ানা জারি করেন।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সোমবার লন্ডনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানান, বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার’ চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, “বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। তারা পুরোপুরি মিডিয়া ট্রায়ালের ওপর নির্ভর করেছে। আমি এই ধরনের অপপ্রচারকে গুরুত্ব দিতে রাজি নই।”
টিউলিপ আরও দাবি করেন, তার আইনজীবীরা বাংলাদেশ সরকারকে লিখিতভাবে বারবার জানালেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তার ভাষায়, “আমি কিছুই ভুল করিনি। এটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক হয়রানিমূলক একটি অপচেষ্টা।”
প্রসঙ্গত, দুদক অভিযোগ করছে—বাংলাদেশে অবকাঠামো প্রকল্পে ৩৯০ কোটি পাউন্ড আত্মসাৎ হয়েছে, যার পেছনে শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের কয়েকজন সদস্য ও ঘনিষ্ঠজনদের ভূমিকা রয়েছে। এই অভিযোগ উত্থাপন করেছেন শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ববি হাজ্জাজ। তার দেওয়া তথ্যমতে, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ-রাশিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে মধ্যস্থতায় অংশ নিয়েছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক, যেখানে খরচ বাড়িয়ে দেখানো হয় বলে অভিযোগ।
এদিকে দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, “এটি কোনোভাবেই টার্গেট করে করা মামলা নয়। দালিলিক প্রমাণের ভিত্তিতেই আমরা তদন্ত করছি।” তিনি আরও জানান, “টিউলিপ সিদ্দিকের উচিত হবে বাংলাদেশের আদালতে এসে আত্মপক্ষ সমর্থন করা। আমরা তাকে সর্বোচ্চ আইনি সহায়তা দিতে প্রস্তুত।”
তবে টিউলিপ সিদ্দিকের আইনজীবীরা এ মামলাকে পুরোপুরি ভিত্তিহীন দাবি করে বলেছেন, “এই অভিযোগের কোনো বাস্তবতা নেই, সব রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত।”
এই মামলার পটভূমিতে উল্লেখযোগ্য, গত বছর আগস্টে শেখ হাসিনার সরকার ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতনের পরই দুদক ব্যাপক পরিসরে দুর্নীতির তদন্ত শুরু করে। এর অংশ হিসেবেই এই মামলা বলে জানা গেছে।
টিউলিপ সিদ্দিক বর্তমানে যুক্তরাজ্যের হ্যাম্পস্টিড অ্যান্ড হাইগেট আসনের এমপি। তিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে একজন পরিচিত মুখ এবং প্রাক্তন সিটি মিনিস্টার হিসেবে তার পদত্যাগের ঘটনা নিয়েও তখন অনেক আলোচনা হয়েছিল।
ঘটনার বহিঃপ্রকাশ আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক পরিসরে নজর কেড়েছে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের মুখপাত্র অবশ্য সরাসরি মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, যুক্তরাজ্য যেহেতু বাংলাদেশকে ‘২বি প্রত্যর্পণ দেশ’ হিসেবে বিবেচনা করে, তাই প্রত্যর্পণের আগে স্পষ্ট প্রমাণ ও যুক্তির ভিত্তিতে বিচারকদের সন্তুষ্ট করতেই হবে।
এই মামলা আগামী দিনে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যকার কূটনৈতিক ও আইনি সম্পর্কেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।