বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে বিগত কয়েক দশকে অবকাঠামোগত উন্নয়ন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত বহু স্কুল-কলেজে নতুন ভবন নির্মাণ, সীমানা প্রাচীর, শহীদ মিনার ও অন্যান্য স্থাপনা গড়ে উঠেছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—এই দালান-কোঠার পেছনে যে বিপুল অর্থ ব্যয় হচ্ছে, তার প্রতিফলন কি শিক্ষার গুণগত মানে দেখা যাচ্ছে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবকাঠামো উন্নয়ন শিক্ষার একটি অংশ হলেও, শিক্ষার মান নির্ভর করে মূলত পাঠদান পদ্ধতি, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, পাঠ্যক্রমের আধুনিকায়ন ও শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশের ওপর। অথচ এই গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোতে এখনও কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হয়নি।
শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দের হার স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ের তুলনায় কমে এসেছে। এক সময় বাজেটের ২১ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ থাকলেও বর্তমানে তা কমে ১২ শতাংশে নেমে এসেছে। এর ফলে অনেক বিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে। অনেক স্কুলের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও সেখানে পাঠদান চলছে। শিক্ষার্থীদের বসার জন্য প্রয়োজনীয় বেঞ্চ নেই, বিশুদ্ধ পানির জন্য টিউবওয়েল নেই, বেশির ভাগ বিদ্যালয়ে সীমানাপ্রাচীর নেই এবং খেলার মাঠও ব্যবহার অনুপযোগী।
শিক্ষার মানোন্নয়নে গৃহীত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও প্রচারণার আড়ালে একটি গভীর নেতিবাচক ফলাফল দেখা যাচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের শিক্ষার মান উন্নয়নে গৃহীত সিদ্ধান্ত এবং তার ফলাফলগুলো পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, শিক্ষার মানের ক্রমাগত পতন ঘটেছে।
শিক্ষার মান উন্নয়নে করণীয় হিসেবে শিক্ষকতা পেশায় মেধা ও যোগ্যতাসম্পন্ন লোকদের আকৃষ্ট করতে হবে। প্রাথমিক থেকে কলেজ পর্যন্ত শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও পাঠ্যক্রমের আধুনিকায়নেও জোর দিতে হবে।
সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হলেও, শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে আরও সমন্বিত ও পরিকল্পিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। শুধুমাত্র অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়। শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদের জ্ঞান, দক্ষতা ও নৈতিকতা বৃদ্ধির মাধ্যমে একটি সুস্থ ও সচেতন সমাজ গঠন করা। এজন্য প্রয়োজন শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।