ঢাকা, ১৭ ফেব্রুয়ারি: এক যুগ আগে হল-মার্ক গ্রুপের ঋণ কেলেঙ্কারির কারণে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়া সোনালী ব্যাংক এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংকটি ২০১২ সালে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার জালিয়াতির ধাক্কা সামলাতে লড়াই করছিল, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি পুনর্গঠনের মাধ্যমে তার অবস্থান দৃঢ় করতে সক্ষম হয়েছে।
সোনালী ব্যাংকের আমানত ও ঋণ প্রবৃদ্ধি
২০১২ সালে ব্যাংকটির আমানত ছিল ৬০ হাজার কোটি টাকা, যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকায়। একইভাবে, ওই সময় ব্যাংকটির ঋণ ছিল ৩৪ হাজার কোটি টাকা, যা এখন প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
হল-মার্ক কেলেঙ্কারির পর ব্যাংকটি উচ্চ ঝুঁকির ঋণ কমিয়ে সরকারি ও নিরাপদ বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকে পড়ে। এখন ব্যাংকটির ঋণের ৩৩ শতাংশ সরকারি খাতে রয়েছে।
ব্যাংকের পুনর্গঠনের কৌশল
✔ আগ্রাসী ঋণনীতি পরিহার: ব্যাংকটি ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ দেওয়ার পরিবর্তে ট্রেজারি বিনিয়োগ, সরকারকে ঋণ প্রদান, ও অন্যান্য ব্যাংককে অর্থ ধার দেওয়ার মাধ্যমে সুদ আয় বাড়িয়েছে।
✔ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে বিনিয়োগ: বড় শিল্পগোষ্ঠীর পরিবর্তে এসএমই এবং রপ্তানি-ভিত্তিক খাতে ঋণ প্রদানকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।
✔ গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি: ২০১২ সালে ব্যাংকটির গ্রাহক ছিল প্রায় ১ কোটি, যা এখন ২ কোটিরও বেশি হয়েছে।
অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও মুনাফা বৃদ্ধি
২০১০ সালে ব্যাংকটি ৯৮ কোটি টাকা লোকসান করেছিল, তবে ২০১১ সালে তা রূপ নেয় ৯৯৬ কোটি টাকা মুনাফায়—যা ব্যাংকের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
➡ ২০২২ সালে নিট মুনাফা: ৬৫২ কোটি টাকা
➡ ২০২৩ সালে নিট মুনাফা: ৬৫২ কোটি টাকা
➡ ২০২৪ সালে পরিচালন মুনাফা: ৫,৬৩৪ কোটি টাকা (ব্যাংক খাতের মধ্যে সর্বোচ্চ)
হল-মার্ক গ্রুপের ঋণ পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা
সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান জানান, “হল-মার্ক গ্রুপের বন্ধকি সম্পদের মূল্য তাদের ঋণের চেয়েও বেশি। আদালতের চূড়ান্ত আদেশ পেলেই এসব সম্পদ খণ্ড খণ্ড করে বিক্রি করা হবে।” ২০২৩ সালে গ্রুপটি থেকে মাত্র ৬ কোটি টাকা আদায় করা সম্ভব হয়েছে, যা পুরো পাওনার তুলনায় নগণ্য।
শীর্ষ খেলাপি গ্রাহক ও অবলোপন ঋণ
সোনালী ব্যাংকের ২০টি শীর্ষ খেলাপি প্রতিষ্ঠানের কাছে আটকে আছে ৫,০৮০ কোটি টাকা, যাদের মধ্যে রয়েছে—
✔ হল-মার্ক গ্রুপ
✔ রূপসী গ্রুপ
✔ মডার্ন স্টিল
✔ তাইপেই বাংলা ফেব্রিকস
✔ অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ
✔ রতনপুর স্টিল
✔ সুপ্রিম জুট অ্যান্ড নিটেক্স
অন্যদিকে, অবলোপন করা ঋণের মধ্যে হল-মার্ক গ্রুপের ১,২২৭ কোটি টাকা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
সোনালী ব্যাংকের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
✅ এসএমই এবং রপ্তানি খাতে আরও বিনিয়োগ বৃদ্ধি
✅ পুরোনো খেলাপি ঋণ আদায়ের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ
✅ সরকারি বিনিয়োগ ও ট্রেজারি আয় বাড়ানো
হল-মার্ক কেলেঙ্কারির পর নতুন কৌশল গ্রহণের ফলে সোনালী ব্যাংক দেশের সবচেয়ে স্থিতিশীল ও লাভজনক ব্যাংকগুলোর মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। যদিও কিছু পুরোনো খেলাপি ঋণের বোঝা এখনো বিদ্যমান, তবে সামগ্রিকভাবে ব্যাংকটি ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।