উন্নত জীবনের আশায় এবং জীবিকার সন্ধানে প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অবৈধ পথে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন অসংখ্য বাংলাদেশি। বিশেষ করে ইউরোপের দেশ ইতালি অনেকের স্বপ্নের গন্তব্য। কিন্তু সেই স্বপ্নপূরণের পথ সহজ নয়—এটি ভীষণ বিপদসংকুল, যেখানে ভূমধ্যসাগর হয়ে লিবিয়া থেকে ইতালিতে যাওয়ার পথে অনেকেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
অবৈধ পথে ইতালিযাত্রা: ভয়ংকর বাস্তবতা
বৈধভাবে ইতালি যাওয়ার সুযোগ সীমিত হওয়ায় বহু বাংলাদেশি আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্রের মাধ্যমে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করেন। দালালদের হাত ধরে বিপুল অর্থ খরচ করে অনেকেই প্রথমে দুবাই, তুরস্ক বা মিসর হয়ে লিবিয়া পৌঁছান। লিবিয়া থেকে ছোট ছোট নৌকায় গাদাগাদি করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করেন তাঁরা।
এই যাত্রার বিভিন্ন ধাপ রয়েছে:
১. লিবিয়া পৌঁছে পাচারকারীদের ক্যাম্পে অপেক্ষা
2. প্রশিক্ষণের নামে সীমিত নৌচালনার ধারণা দেওয়া
3. লিবিয়ার উপকূল থেকে ঝুঁকিপূর্ণ নৌযানে ইতালি অভিমুখে রওনা
4. ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেওয়া জীবন—দালালরা মাঝসমুদ্রে কাউকে সাহায্য করে না
5. ইতালির কোস্টগার্ডের হাতে ধরা পড়লে শরণার্থী হিসেবে রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ার চেষ্টা
6. আশ্রয় মঞ্জুর হলে ইতালিতে থাকার অনুমতি, নতুবা ফেরত পাঠানো
কতজন পৌঁছাতে পারেন, কতজন হারিয়ে যান?
প্রতি বছর হাজার হাজার বাংলাদেশি এই ভয়ংকর পথে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করেন। ২০২৪ সালে প্রায় ৪ হাজার বাংলাদেশি ইতালি পৌঁছাতে সক্ষম হলেও, অন্তত ৭০০ জন নৌকাডুবি বা প্রতিকূল পরিবেশে মারা গেছেন। ২০২৩ সালে এই সংখ্যা ছিল প্রায় ৩,৭৬০ জন, যাঁদের মধ্যে শত শত বাংলাদেশি ছিলেন বলে ধারণা করা হয়।
কেন এত ঝুঁকি নিচ্ছেন বাংলাদেশিরা?
বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের অভাব, ইউরোপের অর্থনৈতিক উন্নতির হাতছানি, এবং ইতালিতে অবস্থানরত আত্মীয়দের সহযোগিতার আশায় অনেকেই দালালদের ফাঁদে পা দেন। শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন জেলার মানুষ বিশেষ করে এই পথে যাত্রা করেন।
সমাধান কী?
- সরকারের উচিত ইতালিসহ ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে বৈধ শ্রম অভিবাসন চুক্তি বাড়ানো
- মানব পাচারকারীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা
- গণমাধ্যম ও স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে ব্যাপক সচেতনতা তৈরি করা
- দেশে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা
একটি উন্নত জীবনের আশা প্রতিটি মানুষের স্বাভাবিক চাওয়া। কিন্তু সেটি যদি জীবন বিপন্ন করে তোলে, তাহলে সচেতনভাবে বিকল্প পথ খোঁজা জরুরি। তাই সবাইকে অবৈধ পথে বিদেশযাত্রার ভয়াবহতা বুঝতে হবে এবং সরকারেরও এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।