রমজানে সয়াবিন তেলের সংকট: ভোক্তাদের বিড়ম্বনা ও বাজার বিশৃঙ্খলা

0
13
সয়াবিন তেল

রমজান মাস ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা বেড়ে গেছে। তবে এবার সবচেয়ে বেশি সংকট দেখা দিয়েছে বোতলজাত সয়াবিন তেলের ক্ষেত্রে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না, যা ভোক্তাদের ভোগান্তিতে ফেলেছে।

রাজধানীর কদমতলী, কারওয়ান বাজার ও আশপাশের বাজারগুলোতে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ মুদি দোকানে পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল নেই। খুচরা বিক্রেতারা জানান, ডিলাররা পর্যাপ্ত সরবরাহ করছেন না। সুপারশপগুলোতে তেল পাওয়া গেলেও ক্রেতাদের শর্ত সাপেক্ষে অন্যান্য পণ্য কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে।

এদিকে ব্যবসায়ীদের দাবি, সরবরাহ কম থাকায় চাহিদার তুলনায় বাজারে তেল কম পাওয়া যাচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশে তেলের ঘাটতি নেই, বরং কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে।

কদমতলী এলাকার বাসিন্দা এনামুল হক বলেন, “প্রতি বছর রমজান এলেই নিত্যপণ্যের বাজারে নাটক শুরু হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সুপারশপেও বোতলজাত সয়াবিন তেল নেই। তাহলে আমরা কীভাবে রান্না করব?”

একই অভিজ্ঞতা হয়েছে আশকোনার বাসিন্দা মো. আলতাফ হোসেনেরও। তিনি বলেন, “সুপারশপে তেল পাওয়া গেলেও শর্ত দেওয়া হচ্ছে, নির্দিষ্ট পরিমাণ অন্য পণ্য কিনতে হবে। এটি ভোক্তাদের প্রতি অন্যায়।”

কারওয়ান বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, তারা কোম্পানির কাছ থেকে চাহিদা অনুযায়ী তেল পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, “আমরা ২০-২৫ কার্টন তেলের চাহিদা দেই, কিন্তু মাত্র ২-৩ কার্টন পাই। এগুলো মুহূর্তেই বিক্রি হয়ে যায়।”

বাংলাদেশ ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা বলেন, “বাজারে খোলা তেলের দামও বেড়েছে। সরবরাহ কম থাকায় পাইকারি বাজারেও সংকট দেখা দিয়েছে।”

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কারওয়ান বাজারে অভিযান চালিয়ে দেখেছে, অনেক দোকানে তেল লুকিয়ে রাখা হচ্ছে। পরে গোপন মজুদ থেকে শত শত বোতল উদ্ধার করা হয়। এমনকি বোতলের এমআরপি ৮১৮ টাকা থাকলেও ৮৫০-৮৫২ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছিল।

ট্যারিফ কমিশন জানিয়েছে, দেশে ভোজ্যতেলের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে এবং আমদানি বেড়েছে। কিন্তু সংকট কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে বলে মনে করছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

বিশ্ববাজারে গত তিন মাস ধরে সয়াবিন তেলের দাম নিম্নমুখী। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে সয়াবিন তেলের আন্তর্জাতিক দাম কমেছে, অথচ দেশে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। পাইপলাইনে দেড় লাখ মেট্রিক টন তেল রয়েছে, যা বাজারে সরবরাহ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

রমজান মাস এলেই বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়, যা সাধারণ ভোক্তাদের দুর্ভোগ বাড়ায়। সরকারি সংস্থাগুলোর তদারকি বাড়াতে হবে এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে প্রতিবারের মতো এবারও ভোক্তারা ন্যায্য দামে পণ্য পেতে ব্যর্থ হবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here