দেশের রাজনীতিতে বড় ধরনের পটপরিবর্তনের পর নতুন এক রাজনৈতিক বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। এক সময়ের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ এখন কার্যত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। ৫ আগস্টের পর থেকে দলটির নেতারা আড়ালে চলে গেছেন, মাঠের রাজনীতি থেকে তাদের অনুপস্থিতি স্পষ্ট। ফলে দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এককভাবে শক্তিশালী অবস্থানে থাকলেও তাদের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও জামায়াতে ইসলামী।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির মধ্যে আদর্শগত পার্থক্য থাকলেও তাদের লক্ষ্য প্রায় একই। তবে ভোটের মাঠে তারা সত্যিকার প্রতিদ্বন্দ্বী হবে নাকি ঐক্যমতের ভিত্তিতে সরকার গঠনের দিকে যাবে, তা এখনো অনিশ্চিত।
জাতীয় নাগরিক পার্টি আত্মপ্রকাশের সময় ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীস জানিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের পর সংবিধানের কাঠামোগত ত্রুটির কারণে ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে। নতুন দলটি সংবিধান পুনর্গঠনের মাধ্যমে একটি নতুন শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তবে কীভাবে এটি বাস্তবায়ন করা হবে, সে সম্পর্কে এখনো রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সুস্পষ্ট ধারণা পাননি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাহবুবউল্লাহ মনে করেন, বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির মধ্যে মতাদর্শগত মিল বেশি, যা ভোটারদের বিভ্রান্ত করতে পারে। অন্যদিকে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানুজ্জামান বলেছেন, নির্বাচনকালীন সময়ে দলগুলোর মধ্যে প্রকৃত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নাকি ঐকমত্য গঠিত হবে, তা নির্ভর করবে ভোটের সুষ্ঠুতা ও রাজনৈতিক কৌশলের ওপর।
বিএনপি যদিও নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণের কারণে আপাতদৃষ্টিতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনে হচ্ছে, তবে বাস্তবে এনসিপি এবং জামায়াত তাদের জন্য কঠিন প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে পারে। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বও মনে করছে, আগামী নির্বাচন তাদের জন্য সহজ হবে না।
পরবর্তী নির্বাচনে বিএনপি এককভাবে লড়াই করবে নাকি কোনো জোট গঠন করবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনীতির এই নতুন মেরুকরণের চূড়ান্ত চিত্র দেখতে হলে দেশবাসীকে নির্বাচনী তফসিল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।