ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যদি হামাস আগামী শনিবার দুপুরের মধ্যে জিম্মিদের মুক্তি না দেয়, তাহলে গাজায় যুদ্ধবিরতি বন্ধ করে তীব্র সামরিক অভিযান শুরু হবে। তিনি আরও বলেন, হামাস সম্পূর্ণ পরাজিত না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েল যুদ্ধ চালিয়ে যাবে।
বিবিসি, আল জাজিরা, টাইমস অব ইসরায়েলসহ একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানিয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘যদি শনিবার দুপুরে হামাস আমাদের বন্দীদের ফিরিয়ে না দেয়, তাহলে যুদ্ধবিরতি শেষ হয়ে যাবে এবং হামাস শেষ পর্যন্ত পরাজিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা লড়াই চালিয়ে যাব।’
যুদ্ধবিরতি ও চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ
গাজায় গত ১৯ জানুয়ারি থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে। তিন-পর্যায়ের এই চুক্তির মধ্যে বন্দী বিনিময়, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহারের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তবে হামাস অভিযোগ করেছে যে, ইসরায়েল চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছে এবং তাদের আচরণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এখন আর বন্দী বিনিময় সম্ভব নয়।
হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবেইদা বলেছেন, ‘শত্রুপক্ষ চুক্তি লঙ্ঘন করছে এবং তারা চুক্তির শর্তাবলীর প্রতি অসম্মান দেখাচ্ছে, অথচ হামাস তার সমস্ত বাধ্যবাধকতা পালন করে যাচ্ছে।’ তিনি আরও দাবি করেন, ইসরায়েল বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের ফেরাতে বিলম্ব করছে, মানবিক সহায়তা বাধাগ্রস্ত করছে এবং নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে।
ইসরায়েলের সামরিক প্রস্তুতি
নেতানিয়াহু হামাসকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জন্য দোষারোপ করেছেন এবং বলেছেন, তিনি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে ‘গাজা উপত্যকার অভ্যন্তরে এবং চারপাশে বাহিনী জড়ো করার’ নির্দেশ দিয়েছেন।
এর মধ্যে হামাস ২১ জন বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে, যার মধ্যে ১৬ জন ইসরায়েলি ও পাঁচজন থাই নাগরিক। বিনিময়ে ইসরায়েল তার কারাগার থেকে ৫৬৬ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে। চুক্তির শর্ত অনুসারে মোট ৩৩ জন বন্দী এবং এক হাজার ৯০০ বন্দী বিনিময় হওয়ার কথা ছিল। তবে ইসরায়েল দাবি করেছে, বন্দীদের মধ্যে আটজন আর বেঁচে নেই।
২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের হামলায় ২৫১ জন ইসরায়েলি আটক হয়েছিল। এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল গাজার বিরুদ্ধে ব্যাপক সামরিক অভিযান চালায়। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই অভিযানে এখন পর্যন্ত ৪৮ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
বর্তমান পরিস্থিতি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, যুদ্ধবিরতি দীর্ঘস্থায়ী না হয়ে আরও সহিংস সংঘাতে পরিণত হতে পারে, যদি উভয় পক্ষের মধ্যে চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে আরও জটিলতা সৃষ্টি হয়।