প্রতি বছর ১১ জুলাই বিশ্বব্যাপী পালিত হয় জনসংখ্যা দিবস। এই দিবসের মূল উদ্দেশ্য হলো বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কারণে উত্থাপিত বিষয়গুলোর দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা। চীনের পর ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনবহুল দেশ।
এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘অধিকার ও পছন্দই মূল কথা, প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার প্রাধান্য পেলে কাঙ্ক্ষিত জন্মহারে সমাধান মেলে। বিধি-নিষেধ মেনে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হচ্ছে।
১৯৮৭ সালের ১১ জুলাই বিশ্ব জনসংখ্যা ৫০০ কোটি ছাড়িয়ে যায়। এরপর সারা বিশ্বের জনমানুষের মধ্যে আগ্রহের সৃষ্টি হয়। ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির পরিচালনা পরিষদ এই দিবসটি প্রতিষ্ঠা করে।
বিশ্ব জনসংখ্যা দিবসের লক্ষ্য হলো পরিবার পরিকল্পনা, লৈঙ্গিক সমতা, দারিদ্র্য, মাতৃস্বাস্থ্য এবং মানবাধিকারের মতো জনসংখ্যা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি করা। যদিও জনসংখ্যা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা তৈরি দিবসটির মূল লক্ষ্য হলেও গত বছর থেকে তা পূরণ হচ্ছে না।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, চলতি বছর ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯১ লাখ ১ হাজার। এর মধ্যে নারী ৮ কোটি ৪০ লাখ ৩০ হাজার, পুরুষ ৮ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার।
এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত বছর প্রতি হাজার মানুষের মধ্যে ৫ দশমিক ১ জন মারা গেছে। তবে শিশু মৃত্যুহার অপরিবর্তিত আছে। বর্তমানে প্রতি হাজারে ২১ শিশু মারা যাচ্ছে। অন্যদিকে মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ১ দশমিক ৬৩ জন হয়েছে, যা আগের থেকে কমেছে। আগের বছর এই হার ছিল ১ দশমিক ৬৫ জন।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী আরও জানা যায়, ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত দেশের জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৮২ লাখ। দেশের মানুষের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল ৭২ বছর ৮ মাস। এর মধ্যে পুরুষের গড় আয়ু ৭১ বছর ২ মাস, নারীর ৭৪ বছর ৫ মাস। এর আগে ২০১৯ সালে দেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৭২ বছর ৬ মাস।
ইউনিসেফের তথ্যমতে, দেশে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। আগামী দুই থেকে আড়াই দশকের মধ্যে বাংলাদেশ প্রবীণপ্রধান দেশে পরিণত হতে পারে। এর ফলে অর্থনীতিতে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর বাড়তি সুবিধা পাওয়ার সুযোগ বাংলাদেশে কমে আসছে। বাংলাদেশ প্রবীণপ্রবণ সমাজে পদার্পণ করবে ২০২৯ সাল নাগাদ। এরপর প্রবীণপ্রধান সমাজ হিসেবে পরিণত পাবে ২০৪৭ সালে।
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধির হার কিছুটা কমে ১ দশমিক ৩০ জন হয়েছে। আগের বছর এ হার ছিল ১ দশমিক ৩২ জন। এই জনসংখ্যার ৫৪ শতাংশ গ্রামে আর ৪৫ শতাংশ শহরে বাস করছে। তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে দেশে জন্মহার ছিল (প্রতি হাজারে) ১৮ দশমিক ১ জন।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, সাত বছর ও তার চেয়ে বেশি জনসংখ্যার শিক্ষার হার এখন ৭৫ দশমিক ২ শতাংশ। আর ১৫ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সী জনসংখ্যার শিক্ষার হার ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশ।
পরিসংখ্যান অনুযাযী, ২০১৯ সালের মাঝামাঝি বিশ্বের জনসংখ্যা ৭৭০ কোটিতে পৌঁছায়। এটি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়ে ২০৩০ সালে ৮৫০ কোটি, ২০৫০ সালে ৯৭০ কোটি এবং এবং ২১০০ সালে গিয়ে ১০৯০ কোটিতে পোঁছাতে পারে বলে জাতিসংঘ অনুমান করছে।
২০৫০ সালের মধ্যে যে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, তার অর্ধেকের বেশি সংঘটিত হবে ৯টি দেশে; এগুলি হল ভারত, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, ইথিওপিয়া, তানজানিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মিশর এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৭ সাল নাগাদ ভারত চীনকে ছাড়িয়ে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল রাষ্ট্রে পরিণত হবে।