ঝিনাইদহের শৈলকুপায় চরমপন্থিদের গোলাগুলিতে ৩ জন নিহত হয়েছে। নিহতরা পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (জনযুদ্ধ) সদস্য ছিলেন বলে জানা গেছে। শুক্রবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার ত্রিবেনী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর শ্মশানঘাট এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
নিহতদের মধ্যে দুইজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে—
🔹 আবু হানিফ ওরফে হানিফ আলী (৫৬) – ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুর আহাদনগর গ্রামের বাসিন্দা ও পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক নেতা।
🔹 লিটন (৩৫) – হানিফের শ্যালক, ঝিনাইদহের শ্রীরামপুর গ্রামের বাসিন্দা।
🔹 অপরজনের পরিচয় এখনো নিশ্চিত নয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাতে জানা যায়, রাত সাড়ে আটটার দিকে এলাকায় তিন-চারটি গুলির শব্দ শোনা যায়। তবে আতঙ্কে কেউ ঘর থেকে বের হননি। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে স্থানীয়রা একত্রিত হয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনজনের মরদেহ ও দুটি মোটরসাইকেল পড়ে থাকতে দেখেন। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।
পুলিশ ও এলাকাবাসীর তথ্য অনুযায়ী, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (জনযুদ্ধ) ও জাসদ গণবাহিনী নামে দুটি চরমপন্থি দলের মধ্যে সংঘর্ষ চলছিল।
পুলিশের ধারণা, শুক্রবার রাতে পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা রামচন্দ্রপুর শ্মশানঘাটে গোপন বৈঠক করছিলেন। তখন জাসদ গণবাহিনীর শীর্ষ নেতা কালুর নেতৃত্বে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়।
এই হত্যার দায় স্বীকার করে জাসদ গণবাহিনীর নেতা কালুর পরিচয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে হোয়াটসঅ্যাপে একটি বার্তা পাঠানো হয়। বার্তায় বলা হয়—
🗣️ “পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি নামধারী কুখ্যাত ডাকাত বাহিনীর শীর্ষ নেতা হানিফ ও তার দুই সহযোগীকে হত্যা করা হয়েছে। যারা অপরাধে যুক্ত থাকবে, তাদেরও একই পরিণতি হবে।”
হানিফের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমা
নিহত হানিফের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ১৩টি হত্যা মামলা রয়েছে।
- ২০০৩ সালের ৫ ডিসেম্বর একই স্থানে পাঁচজনকে হত্যা করা হয়েছিল, সেই ঘটনায়ও তার সম্পৃক্ততা ছিল।
- আব্দুর রহমান হত্যা মামলায় তার মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল এবং উচ্চ আদালতও সেই রায় বহাল রাখে।
- পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিশেষ ক্ষমায় তিনি মুক্তি পেয়ে এলাকায় ফিরে আসেন।
শৈলকুপা থানার ওসি মাসুম খান বলেন, “আমরা খবর পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনজনের মরদেহ পেয়েছি। তাদের মাথায় গুলির চিহ্ন রয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছি।”
এলাকায় চরমপন্থিদের সংঘর্ষ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। একাধিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে পূর্বেও। এই ঘটনার পর স্থানীয়দের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।