২০২৩ সালের শেষে ছিল দেশে ব্যাংকঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৪৭ শতাংশ নতুন বছরের প্রথম দিনেই দেশে ব্যাংকঋণের সুদহার বেড়ে ১১ দশমিক ৮৯ শতাংশে উঠেছে। সরকারি ঋণের সুদহার বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের নেওয়া ঋণের সুদহারও বাড়ছে। কারণ, গত জুলাই থেকে সরকারের ঋণের সুদহারের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে সাধারণ গ্রাহককে দেওয়া ব্যাংকঋণের সুদহার নির্ধারিত হচ্ছে।

২০২৩ এর মাঝামাঝি থেকেই দেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী বাজারভিত্তিক সুদহার নির্ধারণের নিয়ম চালু করতে গত জুন মাস থেকে স্মার্ট (সিক্স মান্থস মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল) সুদহার চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতি মাসে শুরুতে তা ব্যাংকগুলোকে জানিয়ে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

প্রথম মাসে, অর্থাৎ জুনে স্মার্ট সুদের হার ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ, যা নভেম্বরে বেড়ে হয় ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ। ডিসেম্বরে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ। স্মার্ট সুদহারের সঙ্গে ব্যাংকগুলো ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদ যোগ করতে পারে। ফলে সুদহার বেড়ে এখন হয়েছে ১১ দশমিক ৮৯ শতাংশ। সুদহার নির্ধারণে বেশির ভাগ ব্যাংক কিছুটা অপেক্ষা করলেও এখন তা পরিবর্তন করছে। কারণ, ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ঋণের সুদহার বেড়ে প্রায় ১২ শতাংশ ছুঁই ছুঁই করছে।

এ ছাড়া প্রি-শিপমেন্টে রপ্তানি ঋণ এবং কৃষি ও পল্লিঋণের সুদহার নির্ধারণ করতে স্মার্ট সুদহারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদ যোগ করতে পারে ব্যাংকগুলো। এসএমই ঋণের বিপরীতে অতিরিক্ত ১ শতাংশ হারে সেবা মাশুলও নেওয়া যায়।
প্রতি ছয় মাসের ট্রেজারি বিল ও বন্ডের গড় সুদহার বের করে হিসাব করা হয় ‘স্মার্ট’ সুদহার। প্রতি মাসের শেষে বা প্রথম দিনে স্মার্ট সুদহার কত হবে, তা জানিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক, যা পরবর্তী মাসে বিতরণ করা নতুন ঋণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়। সে অনুযায়ী বিদায়ী ডিসেম্বর মাসের স্মার্ট সুদহার জানুয়ারি মাসের জন্য প্রযোজ্য হবে। তবে প্রতি মাসে গ্রাহক পর্যায়ে সুদহার পরিবর্তন করা যায় না।

ঋণের সুদহার বাড়ায় ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহারও বাড়াচ্ছে। আবার তারল্যসংকটে পড়ে কোনো কোনো ব্যাংক উচ্চ সুদে আমানত নিচ্ছে, তারা এমনকি ১২ শতাংশ সুদেও তহবিল সংগ্রহ করছে। এদিকে আমানতের সুদহার বৃদ্ধির কারণে ঘরে রাখা টাকা ব্যাংকে জমা রাখার প্রবণতা বেড়েছে। তবে এখনো আমানতের চেয়ে ঋণের প্রবৃদ্ধি বেশি। ফলে ব্যাংকে টাকার সংকট চলছেই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুনে ব্যাংকের বাইরে থাকা মুদ্রার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৯১ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা, যা অক্টোবরে কমে হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা। ব্যাংকিং-ব্যবস্থার বাইরে থাকা অর্থের পরিমাণ কমায় আমানত বেড়েছে ব্যাংকে। গত জুন মাসে ব্যাংকগুলোতে আমানতের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৯৫ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা, যা অক্টোবরে বেড়ে হয়েছে ১৬ লাখ ৩৬ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। আর জুন মাসে ঋণের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৭০ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা, যা অক্টোবরে বেড়ে ১৬ লাখ ১ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here