দীর্ঘ বিমানযাত্রায় অনেকেই ঘুমিয়ে পড়েন। তাতে কোনো ক্ষতি নেই। তবে উড্ডয়ন (টেক অফ) অর্থাৎ উড়োজাহাজ যখন উড়তে শুরু করে সে সময় ও ল্যান্ডিং বা নামার সময়টাতে না ঘুমানোই ভালো।
এই দুই সময়ে বাতাসের চাপের পরিবর্তন হয় খুব দ্রুত। এই পরিবর্তনের ফলে কানের পর্দায় আকস্মিক চাপ পড়ে, যার কারণে কানে ব্যথা অনুভূত হতে পারে বা কান বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অনুভূতি হতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এর নাম এয়ার ব্যারোট্রমা (বায়ুমণ্ডলীয় চাপ)। এমন সমস্যা এড়ানোর জন্য উড়োজাহাজের যাত্রীদের কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া ভালো। এ সময় চুইংগাম চিবানো, লজেন্স চুষে খাওয়া কিংবা হাই তোলার মতো মুখভঙ্গি করা ভালো। তাহলে বাড়তি চাপের কারণে কানের ভেতরে আর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না। বরং কানের ভেতর ও বাইরের দিকের চাপের মধ্যে একটা ভারসাম্য চলে আসে।
কিন্তু আপনি যদি ঘুমিয়ে থাকেন, তাহলে কিন্তু এগুলোর কোনোটিই করতে পারবেন না। বরং স্বাভাবিকভাবে আমরা মুখের লালা যেভাবে গিলে নিই, ঘুমন্ত অবস্থায় সেটিও কমে যায়। অর্থাৎ মুখের পেশির যে ধরনের নড়াচড়ার সাহায্যে আপনি কানের পর্দার আকস্মিক চাপের হাত থেকে বাঁচতে পারতেন, সেগুলোর কোনোটিই আর করা হয় না। ফলে কানের পর্দায় বাতাসের চাপের প্রভাব আরও বেশি পড়ে।
তা ছাড়া টেক অফ ও ল্যান্ডিং—দুটি বিষয় বিমানযাত্রায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। আপনি যদি এই দুই সময় ঘুমিয়ে পড়েন, তাহলে কিন্তু হঠাৎ ঘটে যাওয়া কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাকে উপলব্ধি করতে পারবেন না সহসা। দুর্ঘটনা ঘটলে নিজের প্রতিরক্ষায় আপনার প্রথম প্রতিক্রিয়া কী হবে, তা বুঝে উঠতেও খানিকটা বেশি সময় লাগতে পারে।
দীর্ঘ আকাশযাত্রায় বোর্ডিং ও এয়ারপোর্টের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে ক্লান্তি বোধ করাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তারপরও টেক অফ ও ল্যান্ডিংয়ের সময়টুকুতে জেগে থাকতে চেষ্টা করুন। ঘুমানোর জন্য এই দুই সময়ের আগের বা পরের কোনো সময়কে বেছে নিন। যেমন দীর্ঘ সময়ের জন্য বোর্ডিং হলে সেখানেই বিশ্রাম নিতে পারেন, যাতে উড়োজাহাজ ছাড়ার সময়টায় ঘুমিয়ে না পড়েন। মোটকথা, নিজের নিরাপত্তার জন্যই হুটহাট ঘুমিয়ে পড়া থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। যাত্রার সময়কাল, যাত্রাবিরতি ও অন্যান্য সব দিক খেয়াল রেখে ঠিক করুন, যাত্রার মধ্যে কখন বিশ্রাম নেওয়াটা ঠিক হবে।