বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা, গুলি করে বিএনপিকে সহিংসতার দিকে নিতে চাচ্ছে। সন্ত্রাস দিয়ে আওয়ামী লীগের জন্ম, সন্ত্রাস দিয়ে দলটি রাজনীতি করে, আর সন্ত্রাস দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করে। রোববার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আগামী নির্বাচনে যেন বিরোধী দল কোনোভাবে অংশ নিতে না পারে, সে কারণে এখন থেকেই ভয়াবহ তাণ্ডব শুরু করেছে সরকার। পুলিশ কোনো আইন না মেনে কথায় কথায় গুলি চালাচ্ছে।
সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনের কর্মসূচি চলবে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারকে অবশ্যই সরে যেতে হবে। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। একটা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। এই দাবি আদায়ে আন্দোলনের কর্মসূচি চলতেই থাকবে। ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে কর্মসূচি আছে। এরপর আবার নতুন কর্মসূচি দেওয়া হবে। চূড়ান্ত বিজয় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। ১৪ দিনে সারা দেশে দলের নেতাকর্মীদের ওপর সরকারের দমনপীড়নের চিত্র তুলে ধরেন তিনি।
বৃহত্তর প্ল্যাটফর্ম গঠন করে আন্দোলনকে বেগবান করার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই বিষয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। আশা করছি, অল্প সময়ের মধ্যে এটাকে চূড়ান্ত করে জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারব।
বিএনপির কর্মসূচিতে ক্ষমতাসীন দল ও পুলিশি হামলার চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ২২ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশ বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনী, খাগড়াছড়ি, খুলনা, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি স্থানে মামলায় প্রায় ৪ হাজার ৮১ জনের অধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামি প্রায় ২০ হাজার। ২০-২৫টি স্থানে বাড়িঘর ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে। এতে নিহত হয়েছে তিনজন, আহত হয়েছে ২ হাজারের অধিক নেতাকর্মী। গ্রেফতারের সংখ্যা ২শ জনের অধিক।
তিনি বলেন, কর্তৃত্ববাদী গণবিরোধী ফ্যাসিস্ট সরকারবিরোধী দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষদের হত্যা, গ্রেফতারের যে অপতৎপরতা অব্যাহত রেখেছে তা বন্ধের আহবান জানাচ্ছি। নিরপেক্ষ তদন্ত করে হত্যাকারী ও হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া হতাহতদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সরকার যদি অশুভ তৎপরতা বন্ধ না করে তাহলে জনগণের ঐক্যের যে আন্দোলন শুরু হয়েছে তা ক্রমান্বয়ে গণবিস্ফোরণে পরিণত হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগের ছলের অভাব নেই। ওরা প্রতিমুহূর্তে ছল তৈরি করে এবং ছল তৈরি করে আন্দোলনকে বিপথে পরিচালিত করে, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে। তারা আমাদের কর্মসূচিকে আগুন সন্ত্রাস নাম দিয়ে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জে মামলা দায়ের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, শাওন হত্যা মামলা দায়ের করেছি। আমরা প্রত্যেক খুন-জখম-হত্যার বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনি লড়াই চালিয়ে যাব।
মিয়ানমার সীমান্তে মর্টারশেল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই সরকারের তো জনগণের শক্তি নেই। তারা টিকে আছে অন্যদের শক্তিতে। যে কারণে তারা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে যে ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন সেই ভূমিকা নিতে পারে না।
রোববার ফরিদপুরসহ কয়েকটি স্থানে বিএনপির কর্মসূচিতে হামলার নিন্দা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার আরও বেশি দানবীয় রূপ ধারণ করেছে। ফরিদপুরে হামলায় কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলসহ নেতাকর্মীদের আহত করার তীব্র নিন্দা জানান তিনি।