ভ্রমণ কোটার বিপরীতে বছরে একজনের নামে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ডলার বা সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ছাড় তথা এন্ডোর্স করতে পারে ব্যাংক ও মানিচেঞ্জারগুলো। তবে এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ২৭টি ব্যাংক ৭১ জন গ্রাহকের বিপরীতে অতিরিক্ত বৈদেশিক মুদ্রা ছাড় করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ অপারেশন বিভাগের তদারকিতে বিষয়টি ধরা পড়ায় সম্প্রতি এসব ব্যাংককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।
জানা গেছে, আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে এসব চিঠি দেওয়া হয়। ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১০৯ (২) ধারায় কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না ৫ কর্মদিবসের মধ্যে ব্যাংকগুলোর কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। এরই মধ্যে অনেক ব্যাংক ব্যাখ্যা দিয়েছে। বেশিরভাগ ব্যাংক জানিয়েছে, ভুলবশত এমন ঘটেছে। এ জন্য তারা দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে সতর্ক করেছেন।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ভ্রমণ কোটার অতিরিক্ত ডলার ছাড় করায় ২৭টি ব্যাংককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।
জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে সীমাতিরিক্ত এসব ডলার ছাড় হয়েছে তেমন না। ২০২১ ও ২০২২ সালের তথ্য বিশ্লেষণ করে এই তথ্য পাওয়া গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনলাইন পদ্ধতিতে ব্যাংকগুলোর আপলোড করা তথ্যের ভিত্তিতে যা বের হয়। মূলত ডলার সঙ্কটের এই সময়ে বিভিন্ন পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সীমাতিরিক্ত ডলার এন্ডোর্সমেন্টের বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মানিচেঞ্জারগুলোর বিরুদ্ধেও বিভিন্ন পদক্ষেপ চলমান আছে।
মানিচেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বিএফআইইউর বৈঠক
মানিচেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে রোববার বৈঠক করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। বিএফইইউর প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিভিন্ন মানিচেঞ্জারের প্রতিনিধি ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সব ধরনের নিয়ম মেনে যেন এসব প্রতিষ্ঠান লেনদেন করে সে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।
এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার কেনাবেচার মধ্যে সর্বোচ্চ দেড় টাকা পার্থক্য রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন অনিয়মে যুক্ত ২৭টি মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব তলব, ৪৫টি প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ, ৫টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত এবং লাইসেন্স ছাড়াই ডলার বেচাকেনা করায় ৯টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তথ্য দেওয়া হয়।
জানা গেছে, আজকের বৈঠকে মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ডলার ক্রয় ও বিক্রির মধ্যে দেড় টাকা ব্যবধান রাখার যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তা কার্যকরে অ্যাসোসিয়েশনও চেষ্টা করছে। সবাই যেন যথাযথ নিয়ম মেনে ব্যবসা করে সে বিষয়েও সতর্ক করা হচ্ছে। তবে বারবার অভিযানের কারণে মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে। অবশ্য নিয়ম মেনে ব্যবসা করলে কোনো ধরনের সমস্যা হবে না বলে বৈঠক থেকে তাদের আশ্বস্ত করা হয়।