রাজধানীর মনিজা রহমান গার্লস স্কুল ও কলেজের ছাত্রীরা বৃহস্পতিবার গেণ্ডারিয়া থানায় বিক্ষোভ করেছে। প্রতিষ্ঠানের এ বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণ হয়নি। আগামী বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নিবন্ধনও করা যায়নি। ইতোমধ্যে ফরম পূরণ ও নিবন্ধনের সময় শেষ হয়েছে। এ খবর পেয়ে ফুঁসে ওঠেছে ছাত্রীরা।
খবর পেয়ে পুলিশ অধ্যক্ষকে থানায় নিয়ে যায়। পরে সেখানে ছুটে যান অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। সেখানে তাকে ঘেরাও করে রাখা হয়। সমস্যা সমাধানে পুলিশের আশ্বাস পেয়ে ছাত্রীরা ফিরে যায়।
অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক লুৎফুন্নাহার একইসঙ্গে দুটি কলেজের অধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব পালন করেন। এর একটি হচ্ছে মনিজা রহমান গার্লস স্কুল ও কলেজ, অপরটি টাঙ্গাইলের ব্রাহ্মণশাসন মহিলা কলেজ। ২০২০ সালে নিয়োগ পাওয়ার পর অন্তত দেড় বছর তিনি উভয় পদে দায়িত্ব চালিয়ে যান। বিষয়টি জানার পর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু ওই কমিটি কাজ শেষ করেনি। এ নিয়ে ঢাকা অঞ্চলের কর্মকর্তাদের দিকে অভিযোগের তির।
পরে ঢাকা বোর্ডে অভিযোগ যায় যে, দুই জায়গায় চাকরি করছেন শিক্ষক লুৎফুন্নাহার। পাশাপাশি তিনি দেড় বছর ধরে এমপিও নিচ্ছেন আগের প্রতিষ্ঠান থেকে। পরে ঢাকা বোর্ডের তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। বলা হয়, নীতিমালা অনুযায়ী একইসঙ্গে একাধিক পদে চাকরি করা বিধিবহির্ভূত। তাছাড়া প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এক জায়গায় চাকরি করা সত্ত্বেও আরেক জায়গায় নিয়োগ দেওয়ায় ওই প্রতিষ্ঠানের (মনিজা রহমান গার্লস স্কুল ও কলেজ) পরিচালনা কমিটির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। শুধু তাই নয়, শিক্ষা বোর্ড নির্দেশনা দেওয়া সত্ত্বেও আগের কমিটি রহস্যজনক কারণে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি।
এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করে কথা বলা সম্ভব হয়নি অধ্যক্ষের সঙ্গে। দুজন শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা কথা বলেননি। তবে জানতে চাইলে পরিচালনা কমিটির তৎকালীন (লুৎফুন্নাহারকে নিয়োগকালীন) সভাপতি স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী শামসুজ্জোহা যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা নিয়োগ দেওয়ার পর আগের স্থান থেকে প্রক্রিয়া শেষ করে আসার জন্য ৩ মাস সময় নেন অধ্যক্ষ লুৎফুন্নাহার। এজন্য তিনি ভাড়া বাবদ কিছু টাকা নিয়েছেন। এছাড়া এখান থেকে কোনো বেতন নেননি। কিন্তু আগের কলেজ থেকে বেতন নিয়েছেন কিনা সেটা আমরা জানি না। বোর্ডের তদন্ত প্রতিবেদন ও ব্যবস্থা নেওয়ার চিঠি পেয়েছি। তবে তিনি এ নিয়ে রিট মামলা করেছেন। তার পক্ষে রিটের রায় আছে।’
বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমানে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেন, তদন্তে একজন ব্যক্তির একইসঙ্গে দুই জায়গায় চাকরি করার সত্যতা পাওয়া গেছে। এটা একটা সাংঘাতিক অপরাধ। ব্যবস্থা নিতে প্রতিবেদন মাউশিতে পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, নিয়োগে এ কেলেংকারির কারণে আগের কমিটি অনুমোদন করেনি ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। এর পরিবর্তে ঢাকা জেলা প্রশাসনের একজন এডিসি সভাপতি হিসেবে কয়েক মাস দায়িত্ব পালন করছেন।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার যুগান্তরকে জানান, তদন্তে নিয়োগে সমস্যাসহ আরও কিছু ত্রুটি চিহ্নিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটিকে ব্যবস্থা নিতে বলা হলেও তারা নিশ্চুপ ছিল। বোর্ড ব্যবস্থা হিসেবে ওই স্কুলের দাপ্তরিক কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। যে কারণে সার্ভার শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ বা নিবন্ধনের তথ্য নেয়নি। তবে এই সমস্যা থাকবে না। মোট দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর ফরম পূরণ এবং নিবন্ধনের কাজ আটকে আছে। বিশেষ বিবেচনায় তাদের কাজ করে দেওয়া হবে। এখন অনিয়মের ব্যাপারে স্কুল কমিটিকে ব্যবস্থা নিতে হবে।
গেণ্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু সাঈদ আল মামুন বলেন, বোর্ডের নিবন্ধন না হওয়ার অভিযোগে শিক্ষার্থীরা অসন্তোষ প্রকাশ করছিল। এ ঘটনায় অধ্যক্ষ এবং ছেলেমেয়েরা আসছিল। ছাত্রী ও অভিভাবকদের বুঝিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে।