চট্টগ্রাম বন্দরে একটি বিতর্কিত শিপিং হ্যান্ডলিং অপারেটর প্রতিষ্ঠান ‘জ্যাক শিপিং অ্যান্ড লজিস্টিকস লিমিটেড’ নিয়ে আবারো উঠেছে প্রশ্ন। ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান কারাগারে থাকলেও, তার ছত্রছায়ায় প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানিটি এখনও নির্বিঘ্নে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
বন্দর পরিচালনায় শিপিং হ্যান্ডলিং অপারেটরের জন্য প্রয়োজন হয় বৈধ ভেন্ডরস অ্যাগ্রিমেন্ট। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট বিভাগে এমন কোনো অ্যাগ্রিমেন্ট নেই বলেই জানিয়েছে পুলিশ। এ অবস্থায় ‘জ্যাক শিপিং’-এর কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলা নিয়মবহির্ভূত এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতার নগ্ন উদাহরণ বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, এই অপারেশন মূলত শুরু হয়েছিল বাংলাদেশ শিপিং অ্যান্ড ট্রেডিং কোম্পানি (BSTC) নামে একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে, যার মালিক ছিলেন চট্টগ্রাম ক্লাবের সাবেক সভাপতি এএ রাজিউল করিম চৌধুরী। তার মৃত্যুর পর ২০০০ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটির নাম জাল সইয়ের মাধ্যমে বদল করে প্রথমে ‘BSTC শিপিং লিমিটেড’ এবং পরে ‘জ্যাক শিপিং অ্যান্ড লজিস্টিকস লিমিটেড’ করা হয়। তদন্তে সিআইডি ও পিবিআই এই স্বাক্ষর জালিয়াতি নিশ্চিত করেছে বলে জানা গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন একটি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চলতে দেওয়া মানে দেশের শীর্ষ বন্দর ব্যবস্থাপনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। আরো বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, দুইবার নাম পরিবর্তন করে ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটিকে লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর করা হলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ কোনো প্রশ্ন তোলে নি, বরং অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও কাজ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছে।
সূত্র বলছে, ২০১৪ সালে তৎকালীন বন্দর চেয়ারম্যানকে সরাসরি নির্দেশ দেন মন্ত্রী শাজাহান খান, যার লিখিত প্রমাণ হিসেবে মন্ত্রীর একান্ত সচিব সোহরাব হোসেন স্বাক্ষরিত ডিও লেটারও আছে। এর ফলে, প্রতিষ্ঠানটি কার্যত রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকেই বছরের পর বছর অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করে গেছে।
রাজিউল করিম চৌধুরীর ছেলে মোরশেদ আরিফ চৌধুরী জানান, তার পিতার মৃত্যুর পর জাল কাগজপত্রে স্বাক্ষর ও এফিডেভিট দেখিয়ে শেয়ার হস্তান্তর করা হয়েছে। এসব বিষয়ে মামলা থাকলেও, প্রভাবশালী মন্ত্রীর কারণে আইনি কোনো অগ্রগতি ঘটেনি।
বর্তমানে শাজাহান খান কারাগারে থাকলেও, তার প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়নি। বরং বন্দরের দায়িত্বশীলরাও বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন। বন্দর পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম বলেন, জ্যাক শিপিং অ্যাগ্রিমেন্ট সংক্রান্ত শর্ত চ্যালেঞ্জ করে আদালতে মামলা করেছে, আর আদালত কোনো নিষেধাজ্ঞা না দেওয়ায় তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
তবে ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছেন, অবিলম্বে বিষয়টির স্বাধীন তদন্ত হওয়া উচিত। এতে শুধু চট্টগ্রাম বন্দর নয়, দেশের বাণিজ্যিক নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতা রক্ষাও নিশ্চিত হবে।