বাংলাদেশ থেকে নেপাল ও ভুটানে পণ্য পরিবহনের জন্য স্থলপথে ট্রান্সশিপমেন্টের যে সুযোগ সম্প্রতি চালু হয়েছিল, সেটি আবারও সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। এই সিদ্ধান্তে হতাশ হয়েছে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী মহল, যারা এই রুট ব্যবহার করে দক্ষিণ এশিয়ার বাজারে আরও বিস্তার লাভের স্বপ্ন দেখছিলেন।
এর আগে সকালে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশী তরুণ উদ্যোক্তা আশিক চৌধুরী বিনিয়োগকারীদের আহ্বান জানান বাংলাদেশে পণ্য উৎপাদন করে তা প্রতিবেশী দেশগুলোতে রফতানির মাধ্যমে লাভবান হতে। ঠিক এই ঘোষণার কিছুক্ষণ পরই ভারত থেকে ট্রান্সশিপমেন্ট স্থগিতের ঘোষণা আসায় অনেকেই এটিকে ‘আশ্চর্যজনক সমাপতন’ হিসেবে দেখছেন, কেউ কেউ আবার সন্দেহ প্রকাশ করছেন এর পেছনে ভূ-রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের এই আচরণ নতুন নয়। অতীতেও একাধিকবার দেখা গেছে, বাংলাদেশ যখন আঞ্চলিক বাণিজ্য জোরদারের চেষ্টা করেছে, তখন কোনো না কোনো অজুহাতে ভারত বাধা দিয়েছে। অনেকে এও মনে করেন, ভারতের সহযোগিতার আড়ালে লুকিয়ে থাকে কৌশলগত স্বার্থ।
ভারতের ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তার বিষয়ে এখনও নানা মত রয়েছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, ভারতের লক্ষ্য ছিল মূলত পাকিস্তানের পূর্ব অংশকে দুর্বল করে পশ্চিম সীমান্তে চাপ কমানো, বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণ নয়।
বর্তমানে নেপাল ও ভুটান বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার। বিশেষ করে ভুটান বাংলাদেশের সঙ্গে এফটিএ (FTA) চুক্তিতে আগ্রহী, এবং নেপালও দক্ষিণ এশিয়ার বিকল্প বাণিজ্য রুট হিসেবে বাংলাদেশকে ব্যবহার করতে চায়। এই প্রেক্ষাপটে ভারতের হস্তক্ষেপ শুধুই বাণিজ্যিক স্বার্থ নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ায় আধিপত্য ধরে রাখার কৌশল হিসেবেও দেখা যেতে পারে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। তবে ব্যবসায়ী মহলের দাবি, ভারতের এই একতরফা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জোরালো কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের হঠাৎ সিদ্ধান্ত বাণিজ্যিক ক্ষতির কারণ না হয়।
বাংলাদেশ এখন বিকল্প রুট ও আন্তর্জাতিক জোটের সন্ধান করছে, যাতে ভারতের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় আরও শক্তিশালী বাণিজ্যিক অবস্থান গড়ে তোলা যায়।