হাতিল: অবিরাম উৎকর্ষের প্রচেষ্টায়

0
168

বাংলাদেশের আসবাব শিল্পে হাতিল আজকে অন্যতম প্রধান একটি নাম। তিরিশ বছরের ও বেশি সময় পেরিয়ে হাতিল আজকে শুধু তার নামের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। হাতিল আজ সৌন্দর্য আর আভিজাত্যের প্রতীক। হাতিল মানে বিশ্বস্ততা। আর একারণেই হাতিল আজ বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় আসবাব ব্র্যান্ড।

হাতিল এর সফলতার অন্যতম কারন হচ্ছে এর নেতৃত্বের বিচক্ষণতা এবং আসবাব শিল্প সম্পর্কে গভীর ধারনা। ১৯৬৩ সালে এইচ এ টিম্বার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এর মাধ্যমে যে যাত্রার শুরু, তাঁরই ধারাবাহিকতায় এবং এর অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে ১৯৮৯ সালে দূরদর্শী উদ্যোক্তা জনাব সেলিম এইচ রহমানের হাত ধরে হাতিলের আবির্ভাব হয়। আপোষহীন মান নিয়ন্ত্রণ আর ডিজাইনের উৎকর্ষতার কারনে আজ হাতিল নামটি আধুনিকতা এবং স্থায়িত্বের একটি অন্যতম আইকন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

পরিবেশ এবং কর্মীবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে হাতিল বরাবরই গর্ব করে থাকে। আর একারণেই উৎপাদনের অপচয় হ্রাস এবং সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা হাতিলের একটি প্রধান বিবেচ্য বিষয়। উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ক্রমাগত আধুনিকায়ন এবং রিসাইকেলিং সিস্টেমের সফল বাস্তবায়ন সেই প্রচেষ্টারই অংশ।

বাংলাদেশে আসবাবপত্র শিল্প বরাবরই চ্যালেঞ্জিং ছিল এবং যখন হাতিল তার যাত্রা শুরু করে, দেশীয় আসবাবের বাজার তখন ছিলো বিদেশী পণ্যের চাপে একরকম কোণঠাসা। যার ফলে বাজারে টিকে থাকাও ছিলো বেশ কঠিন। কিন্তু হাতিলের নেতৃত্যের দীর্ঘদিনের কাঠের ব্যবসার অভিজ্ঞতা আর বাজার সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা থাকায় মানসম্পন্ন পণ্য সরবারহের সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়। আজ যেমন হাতিল আমদানিকৃত আসবাবপত্রের উপর নির্ভরতা কমাতে সক্ষম হয়েছে, তেমনি বিদেশী পণ্যের আমদানিও কমে এসেছে। শুধু তাই নয়, হাতিল এর আসবাব এখন দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্ব বাজারেও রপ্তানিও হচ্ছে। দেশে তৈরী আসবাব রপ্তানির মাধ্যমে হাতিল বিদেশে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করে চলেছে প্রতিনিয়ত; “মেড ইন বাংলাদেশ” শুনলে আমাদের বুকটাও গর্বে ভরে ওঠে।

ঢাকায় মাত্র দুটি শোরুম দিয়ে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, আজ তা একটি গেম-চেঞ্জার ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। সারা দেশে হাতিলের ৭০ টিরও বেশী শোরুম ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এবং দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও সফলতার চিহ্ন রেখে চলেছে। হাতিল এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, থাইল্যান্ড, মিশর, রাশিয়া, নেপাল, ভুটান এবং ভারতের মতো দেশে একটি জনপ্রিয় আসবাবের ব্র্যান্ড। নিজস্ব কারখানায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং কাইজেন ফিলসফির অব্যহত বাস্তবায়নের কারণে শুধু মাত্র বাংলাদেশে নয়, দক্ষিণ-এশিয়ার সবচেয়ে আধুনিক ডিজাইনের আসবাব প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি হিসেবে হাতিলের নাম আজ উচ্চারিত হয়।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে রপ্তানির মাধ্যমে হাতিল ১৫ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি আয় করে। কোভিড-১৯ এ বিপর্যস্ত অর্থনীতির কারণে পরের বছরে তা হ্রাস পেয়ে ১৩ লাখ মার্কিন ডলারে নামলেও, হাতিল চমৎকার ব্যবস্থাপনা এবং দৃঢ় নেতৃত্যের কারণে এই ভীষন প্রতিকূলতার মধ্যেও ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। ফলস্বরূপ, রপ্তানি আয় ২০২০-২১ অর্থবছরে পুনরায় ১৫ লাখ মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। মহামারীর মারাত্নক প্রভাব বিবেচনায় সেটি অবশ্যই প্রশংসনীয় এবং উল্লেখযোগ্য একটি কীর্তি।

হাতিল-এর অবিশ্বাস্য অধ্যবসায়, জাতীয় রপ্তানিতে বিশেষ অবদান এবং আমদানিকৃত পণ্যের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকার ফলস্বরূপ, হাতিলকে ‘বেস্ট ইন ইমপোর্ট সাবস্টিটিউশন’ বিভাগে ‘২য় HSBC বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ এ ভূষিত করা হয়েছে HSBC বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ডটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ব্রিটিশ হাইকমিশন, ঢাকা-এর সহযোগিতায় আয়োজিত হয়। বিশেষ সম্মানীয় এই পুরষ্কারটির মাধ্যমে বাংলাদেশের বিশিষ্ট কোম্পানি এবং সংস্থাগুলির গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি দেয়া হয়। বর্তমান ৮টি বিভাগে পুরষ্কার দেয়া হচ্ছে, তারমধ্যে, ‘বেস্ট ইন ইমপোর্ট সাবস্টিটিউশন’ বিভাগটি এমন সংস্থার অবদানকে পুরস্কৃত করে যারা ১ কোটি মার্কিন ডলার বা তার বেশি মূল্যমানের আমদানি হ্রাসে বা আমদানির বিকল্প হিসেবে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। গ্রাহকদের কাছে মানসম্পন্ন পণ্য সরবরাহ করা ও সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের শিল্প ও অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পেরে এবং সর্বোপরি এমন একটি কৃতিত্ব অর্জন করতে পেরে হাতিল নিজেকে ধন্য মনে করে।

মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কারের দ্বিতীয় সংস্করণটির এবারের থিম হচ্ছে- ‘দ্য ইয়ার অফ রেজিলিয়েন্স’ যা সময়োপযোগী এবং কোভিড পরবর্তী বিশ্ব অর্থনীতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য অনুপ্রেরণা যোগাবে বলে আশা করা যায়। শক্তিশালী অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি আর অর্থনৈতিক স্থিতাবস্থার কারণে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতিগুলোর একটি। এই সম্ভাবনার অর্থনীতি নতুন নতুন প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে মহামারীর আঘাতের ক্ষতি থেকে দ্রুতই উত্তরণ করতে পারবে বলে আশা করা যায়। এইচএসবিসি বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ডের লক্ষ্য বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতির টেকসই প্রবৃদ্ধিতে ব্যবসায়িক উদ্যোগ ও উদ্যোক্তাদের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং এই স্বীকৃতি অর্জনের জন্য হাতিল তার সকল শুভানুধ্যায়ীদের কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানায় এবং ভবিষ্যতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার আশা করে।

হাতিল-এ, আমরা অব্যহত উন্নয়নে বিশ্বাস করি এবং উৎকর্ষের এই প্রচেষ্টা অবিরাম চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here