‘মাসুদ রানা’ ও ‘কুয়াশা’ সিরিজের ৩১০ বই প্রকাশ-বিক্রিতে স্থিতাবস্থা

0
102

পাঠকপ্রিয় স্পাই থ্রিলার ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের ৩১০টি বইয়ের মালিকানা স্বত্ব সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যথন্ত এসব বইয়ের প্রকাশ ও বিক্রিতে ‘স্থিতাবস্থা’ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

সেই সঙ্গে এসব বইয়ের মালিকানা স্বত্ব সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সেবা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী কাজী আনোয়ার হোসেনের উত্তরাধিকারীদের আপিলের অনুমতি দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।
কাজী আনোয়ার হোসেনের উত্তরাধিকারীদের লিভটু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) গ্রহন করে সোমবার এ আদেশ দেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ।
আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মুরাদ রেজা ও হামিদুল মিসবাহ।

রেজিস্ট্রার অব কপিরাইটসের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ও মো. ইফতাবুল কামাল অয়ন।
আইনজীবী খুরশীদ আলম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, “মাসুদ রানা ও কুয়াশা সিরিজের ৩১০টি বইয়ের লেখক শেখ আব্দুল হাকিম বইগুলোর ‘মালিকানা সত্ব’ দাবি করে সেবা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী কাজী আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২৯ জুলাই কপিরাইট অফিসে কপিরাইট আইনের ৭১ ও ৮৯ ধরা লঙ্ঘনের অভিযোগ  দায়ের করেছিলেন। আপিল বিভাগ সে কার্যইক্রমে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি এসব বইয়ের প্রকাশ ও বিক্রিতে স্থিতাবস্থাও জারি করেছেন। ”
আর কপিরাইট অফিসের আরেক আইনজীবী মো. ইফতাবুল কামাল অয়নের ভাষ্য, “এসব বইয়ের বাণিজ্যিক কার্যেক্রমে স্থিতাবস্থা জারি করায় সেবা প্রকাশনী বা অন্য যে কেউ ৩১০টি বই প্রকাশ বা বিক্রি করতে পারবে না। ”
তবে কাজী আনোয়ার হোসেনের উত্তরাধিকারীদের আইনজীবী হামিদুল মিসবাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, “আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় স্থগিত করে স্টেটাস কো (স্থিতাবস্থা) দিয়েছেন। তার মানে হল- সেবা প্রকাশনী চাইলে মাসুদ রানা ও কুয়াশা সিরিজের ৩১০টি বই প্রকাশ বিক্রি করতে পারবে। ”
‘মাসুদ রানা‘ ২৬০টি এবং ‘কুয়াশা’ সিরিজের ৫০টি বইয়ের ‘মালিকানা সত্ব’ দাবি করে সেবা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী কাজী আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২৯ জুলাই কপিরাইট অফিসে অভিযোগ দায়ের করেন বইগুলোর লেখক শেখ আব্দুল হাকিম। সেখানে কপিরাইট আইনের ৭১ ও ৮৯ ধরা লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয় কাজী আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে।
তিন দফা শুনানি, দুই পক্ষের যুক্তি-পাল্টা যুক্তি ও তৃতীয় পক্ষের বক্তব্যের পার রেজিস্ট্রার অব কপিরাইট ২০২০ সালের ১৪ জুন রায় দেন। রায়ে কাজী আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে কপিরাইট আইনের ৭১ ও ৮৯ ধারা লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়। রায়ের সিদ্ধান্তে বলা হয়, ‘সুষ্ঠু সমাধান ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে কপিরাইট বোর্ড বা বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহন পর্যরন্ত আবেদনকারীর দাবিকৃত ও তালিকাভুক্ত বইগুলোর প্রকাশ বা বণিজ্যিক কার্যরক্রম গ্রহন থেকে বিরত থাকার জন্য প্রতিপক্ষকে (কাজী আনোয়ার হোসেনকে) নির্দেশনা দেওয়া হলো। এছাড়া প্রতিপক্ষকে আবেদনকারীর কপিরাইট রেজিস্ট্রেশনকৃত প্রকাশিত বইগুলোর সংস্করণ ও বিক্রিত কপির সংখ্যা এবং বিক্রয় মূল্যের হিসাব বিবরণী এ আদেশ জারির তারিখের পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হল। ’
কপিরাইট অফিসের এ সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে ২০২০ সালে হাইকোর্টে রিট করেন কাজী আনোয়ার হোসেন। সে রিটের প্রাথমিক শুনানির পর ওই বছরের ১০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট কপিরাইট অফিসের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে রুল দেন। ‘এখতিয়ার বহির্ভূত’ বিবেচনায় কপিরাইট অফিসের ওই রায় কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না- জানতে চাওয়া হয় রুলে।
সব পক্ষের শুনানির পর রুল খারিজ করে অর্থাৎ কপিরাইট অফিসের সিদ্ধান্ত বহাল রেখে গত বছর ১৩ ডিসেম্বর রায় দেন হাইকোর্ট। আদালত রায়ে বলে দেন কাজী আনোয়ার হোসেন কোনো প্রতিকার চাইলে কপিরাইট আইন, ২০০০ অনুযায়ী জেলা অথবা দায়রা জজ আদালতে যেতে পারবেন।
এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন কাজী আনোয়ার হোসেনের উত্তরাধিকারীরা। গত ২৪ এপ্রিল সে আবেদন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে উঠলে তা শুনানির তারিখ দিয়ে নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। সে ধারাবাহিকতায় সোমবার শুনানির পর আদেশ হল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here